




মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় আমেরিকায় পড়তে যাওয়ায় এক মেয়ের পরিবারকে এলাকায় সমাজচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের মেয়ে ঝর্ণা চৌধুরী। তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকায় পাড়ি জমান গত ২৬ ডিসেম্বর। সোমবার (৩১ জানুয়ারি) ঝর্ণার বাবা আব্দুল হাই চৌধুরী, সমাজচ্যুত করায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে। ঝর্ণা গনমাধ্যমকে অভিযোগ করে বলেন, উচ্চশিক্ষায় তিনি বিদেশে পাড়ি জমান। বিদেশে যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে দেশে তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছে স্থানীয় মসজিদ কমিটি।
ইউএনও বরাবর দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঝর্ণা ২০০৭ সাল থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত ছিলেন। একটি সামাজিক সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নারীর অধিকার রক্ষায় তিনি বিভিন্ন কাজে যুক্ত ছিলেন। এ কারণে এলাকার কিছু লোক তাকে সব সময় অন্য চোখে দেখত। অভিযোগে আরও বলা হয়, আমেরিকায় অবস্থানরত ঝর্ণার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে এলাকায় নানা অপবাদ প্রচার করে একটি পক্ষ। ফেসবুকে তারা প্রচার করেন, ঝর্ণা নাস্তিক হয়ে গেছেন। এরপর স্থানীয় মসজিদ কমিটি সভা ডেকে আব্দুল হাইয়ের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেয়। এ ঘটনায় তিনি সামাজিকভাবে চাপে আছেন।





ঝর্নার বাবা আব্দুল হাই মুঠোফোনে জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেইসবুকে) আমার মেয়ের নামে কুৎসা রটান কিছু লোক। এ ঘটনায় শাহপরাণ থানায় জিডিও করেছিলেন ঝর্ণা। পরে গত ২৬ ডিসেম্বর উচ্চশিক্ষার জন্য সে আমেরিকা চলে যান।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ঝর্ণার বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর আমি উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকায় পাড়ি জমাই। এরপর থেকে স্থানীয় একটি মৌলবাদী গোষ্ঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাকে নিয়ে কুৎসা রটাতে থাকে। বিদেশ গিয়ে আমি ছোট কাপড় পরছি, নাস্তিক হয়ে গেছি-এমন কথা তারা প্রচার করতে থাকে। এতে করে আমি বিব্রত বোধ করছি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার ব্যাপক মান হানি হচ্ছে।





তিনি আরও বলেন, স্থানীয় ভাটেরা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটি আমার বাবা আব্দুল হাইকে সালিশ বৈঠক ডাকেন। গুরুতর অসুস্থ থাকায় বাবা যেতে পারেননি। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়ার নির্দেশে আমার পরিবারকে এক ঘরে করে দেয়া হয়।’
ঝর্ণা অভিযোগ করে করে বলেন, সমাজচ্যুতির খবর পেয়ে তিনি মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিন মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি নাকি আমেরিকায় এসে আমার এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী একজনকে বিয়ে করেছি। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাছাড়া আমার বাবা কেন তাদের নির্দেশ মানেননি, তাই আমার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছে।





সমাজচ্যুতির বিষয়ে জানতে পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের মোবাইলে বারবার যোগাযোগ করলেও তারা ফোন ধরেননি। ভাটেরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এটি সমাধানে আমরা চেষ্টা করছি।
কুলাউড়া উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, সমাজচ্যুতির বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার পরই সমজিদ কমিটিকে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়াও আগামী ৯ তারিখ তাদেরকে অফিসে আসতে বলেছি। ঝর্ণার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় থানাকেও অবগত করা হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য: