কিসমিস এর উপকারিতা কি? নিয়মিত কিসমিস খেলে যা হয়।

কিসমিস এর উপকারিতার কথা এক কথায় বলে শেষ করা যাবে না। এমনকি ভেজানো কিসমিসের পানিও শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। কিসমিসে রয়েছে ভিটামিন,খনিজ,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, পলিফেনলস এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি ফাইবার। যা শরীরে যেমন শক্তি যোগায় তেমনি রক্ত উৎপাদনেও সহায়তা করে।

কিসমিস কি?

কিসমিস হল শুকনো আঙ্গুর। এটিকে ইংরেজিতে রেইসিনও বলা হয়। কিশমিশ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত হয় এবং এটি সরাসরি খাওয়া যায় ও বিভিন্ন খাদ্য রান্নার সময় উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি প্রাচীনকাল থেকে শক্তি বা ক্যালরির চমৎকার উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

কিসমিস তৈরির জন্য আঙ্গুরকে সূর্যের তাপে শুকানো হয়। আঙ্গুর শুকানোর সময় এর আর্দ্রতা কমে যায় এবং এর স্বাদ মিষ্টি হয়ে ওঠে। কিসমিস বিভিন্ন ধরণের হতে পারে, যেমন কালো কিসমিস, গাঢ় বাদামী কিসমিস, এবং সোনালি কিসমিস। কালো কিসমিস সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। গাঢ় বাদামী কিসমিস মিষ্টি স্বাদের এবং সোনালি কিসমিস সবচেয়ে নরম।

কিসমিস এর উপকারিতা

কিশমিস হল শুকনো আঙ্গুর। এটি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার যা বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিসমিস খাওয়ার উপকারিতাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • রক্তস্বল্পতা কমায়: কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। কিসমিস খেলে রক্তস্বল্পতা কমাতে সাহায্য হয়।
  • হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: কিসমিসে পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা উভয়ই হৃদয়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ম্যাগনেসিয়াম রক্তনালীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করে। কিসমিস খেলে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য হয়।
  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: কিসমিসে পটাশিয়াম এবং ফাইবার থাকে, যা উভয়ই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফাইবার কোলেস্টেরলকে শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে। কিসমিস খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য হয়।
  • হজমশক্তি বাড়ায়: কিসমিসে ফাইবার থাকে, যা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে এবং হজমের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। কিসমিস খেলে হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য হয়।
  • শক্তি বাড়ায়: কিসমিসে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা শক্তির প্রধান উৎস। কিসমিস খেলে শরীরে শক্তির মাত্রা বাড়ে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: কিসমিসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ক্ষতিকর উপাদান থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। কিসমিস খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য হয়।

কিসমিস খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হল সারারাত কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেই পানি এবং কিসমিস খাওয়া। কিসমিস ভিজিয়ে রাখলে এর পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়।

কিসমিস খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন:

  • অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকে।
  • কিসমিস খেলে মুখের ভেতর শুষ্কতা হতে পারে। তাই কিসমিস খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।

কিসমিস একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবার যা বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। নিয়মিত কিসমিস খেলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।

আরো পড়ুন ঃ চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা

কিসমিস এর উপকারিতা

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

কিসমিস শুকনো খাওয়ার পরিবর্তে ভিজিয়ে খেলে এর উপকািরতা বেশি পাওয়া যায়। কিসমিস ভেজানো পানি রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন নিয়ম মাপিক কিসমিসের পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি পাবেন কোন প্রকার ওষুধ ছাড়াই।

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, রাতে এক কাপ পানিতে এক মুঠো কিসমিস ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেই কিসমিস ধুয়ে খেয়ে সেই পানি পান করুন। কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন, কিসমিসগুলি নরম না হয়ে যায়।

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন:

  • অতিরিক্ত কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়া উচিত নয়।
  • যদি আপনি ডায়াবেটিস রোগী হন, তাহলে কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়া একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। এটি শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

কিসমিস পানিতে কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়?

কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রাখার জন্য সাধারণত ৮-১২ ঘন্টা সময় দেওয়া হয়। তবে, আপনি যদি কিসমিসগুলোকে আরও বেশি নরম করে নিতে চান, তাহলে সেগুলোকে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখতে পারেন।

কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রাখার জন্য একটি পরিষ্কার পাত্রে কিসমিসগুলো ধুয়ে নিন। তারপর, পাত্রে পরিমাণমতো পানি ঢেলে কিসমিসগুলো ঢেকে দিন। পাত্রটি ঢেকে রাখুন এবং রাতে রেখে দিন। পরেরদিন সকালে কিসমিসগুলো ছেকে নিয়ে পানি পান করুন।

কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এর পুষ্টিগুণগুলো পানিতে দ্রবীভূত হয়ে যায়। এই পানিতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এই পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

কিসমিস পানি পান করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে, হজমশক্তি বাড়াতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, রক্তাল্পতা দূর করতে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে।

কিসমিস খাওয়ার সতর্কতা

যদিও কিসমিস একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। তবুও, কিসমিস খাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

কিসমিস খাওয়ার সতর্কতাগুলি হল:

  • অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া উচিত নয়। কিসমিসে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই অতিরিক্ত কিসমিস খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • কিসমিস খেলে মুখের ভেতর শুষ্কতা হতে পারে। তাই কিসমিস খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।
  • কিসমিস খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া উচিত। কারণ কিসমিসে ধুলোবালি এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ থাকতে পারে।
  • কিসমিস খাওয়ার আগে এটি ভালো করে দেখে নিতে হবে। যদি কিসমিস নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তা খাওয়া উচিত নয়।

কিসমিস খাওয়ার ক্ষেত্রে আরও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে, যেমন:

  • যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে কিসমিস খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
  • যদি আপনার কিডনিতে সমস্যা থাকে, তাহলে কিসমিস খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

কিসমিস একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবার। তবে, সতর্কতার সাথে কিসমিস খেলে এর উপকারিতা থেকে সর্বোচ্চ লাভ পাওয়া যায়।

দিনে কয়টি কালো কিসমিস খাওয়া উচিত?

দিনে ৩০-৪০টি কালো কিসমিস খাওয়া যেতে পারে। এটি শরীরের জন্য উপকারী। তবে, ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে দিনে ২৫-৩০টি কিসমিস খাওয়াই ভালো।

কালো কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি রক্তশূন্যতা, হজমশক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, হার্টের স্বাস্থ্য, কিডনির স্বাস্থ্য, কোলেস্টেরল, এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন:

  • অতিরিক্ত কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়া উচিত নয়।
  • যদি আপনি ডায়াবেটিস রোগী হন, তাহলে কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

পাঠকের মন্তব্য:

Check Also

ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

ছোলা খাওয়ার উপকারিতা: ছোলা কেন আপনার খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত কাঁচা?

ছোলা বাঙালির খাদ্যতালিকার একটি অপরিহার্য অংশ। বিশেষ করে রোজার মাসে ইফতারের পাতে ছোলা থাকতেই হবে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *