হজমশক্তি হলো খাদ্যকে ছোট ছোট অংশে ভেঙে শরীরের জন্য উপকারী উপাদান হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষমতা। হজমশক্তি দুর্বল থাকলে খাবার সঠিকভাবে হজম হয় না
Table of Contents
বদহজম কী?
বদহজম হল একটি সাধারণ সমস্যা যা খাবার হজম করতে অসুবিধা হয়। এটি পেটে ব্যথা, ফোলাভাব, ঢেকুর, বমি বমি ভাব এবং বমিভাবের মতো বিভিন্ন লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।
বদহজমের লক্ষণগুলি সাধারণত খাবার খাওয়ার পরে শুরু হয় এবং কয়েক ঘন্টা বা কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, লক্ষণগুলি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করতে পারে।
বদহজম কেন হয়?
বদহজম হল একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা যা পেটে ব্যথা, অস্বস্তি, পেট ফাঁপা, ঢেকুর, এবং বমি বমি ভাব দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। বদহজমের অনেক কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
- খাদ্য অসহিষ্ণুতা বা অ্যালার্জি: কিছু লোক নির্দিষ্ট খাবারে অ্যালার্জি বা অসহিষ্ণুতা থাকতে পারে, যা বদহজমের কারণ হতে পারে। এই খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে দুগ্ধ, গম, সয়া, এবং সীফুড।
- খাবার খাওয়ার অভ্যাস: খাওয়ার সময় অতিরিক্ত দ্রুত খাওয়া, খাওয়ার পরে শুয়ে পড়া, বা নিয়মিত নিয়মিত খাওয়া বদহজমের কারণ হতে পারে।
- খাদ্যের পরিমাণ: একবারে খুব বেশি খাওয়া বা খুব বেশি তেলযুক্ত, ভাজা, বা মশলাদার খাবার খাওয়া বদহজমের কারণ হতে পারে।
- মানসিক চাপ: মানসিক চাপ পেটের অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে, যা বদহজমের কারণ হতে পারে।
- স্বাস্থ্য সমস্যা: কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD), পেটের আলসার, এবং ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS), বদহজমের কারণ হতে পারে।
বদহজম সাধারণত ঘরোয়া প্রতিকার দ্বারা চিকিত্সা করা যেতে পারে। এই প্রতিকারগুলির মধ্যে রয়েছে:
- অ্যান্টাসিড বা অ্যাসিড ব্লকারের মতো ওষুধ খাওয়া।
- খাওয়ার পরে 30 মিনিট হাঁটা বা অন্য কোনও হালকা শারীরিক কার্যকলাপ করা।
- খাওয়ার আগে এবং পরে ঠান্ডা জল পান করা।
- চা, কফি, অ্যালকোহল, এবং ধূমপান এড়ানো।
- প্রোটিন, ফাইবার, এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।
যদি ঘরোয়া প্রতিকারগুলি কাজ না করে বা যদি বদহজম নিয়মিত হয়, তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। ডাক্তার বদহজমের কারণ নির্ণয় করতে এবং প্রয়োজনীয় চিকিত্সা সুপারিশ করতে পারেন।
বদহজম এর লক্ষণ
বদহজমের লক্ষণগুলি সাধারণত খাবার খাওয়ার পরে শুরু হয় এবং কয়েক ঘন্টা বা কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, লক্ষণগুলি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করতে পারে।
বদহজমের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- পেটে ব্যথা, ফোলাভাব, অস্বস্তি বা ভার বোধ
- ঢেকুর
- বমি বমি ভাব বা বমি
- বুক জ্বালা
- তৃষ্ণা
- ক্ষুধা হ্রাস
বদহজমের কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- খাদ্যের অত্যধিক পরিমাণ
- দ্রুত খাওয়া
- খাবার ভালোভাবে না চিবানো
- অতিরিক্ত মদ্যপান
- ধূমপান
- কিছু নির্দিষ্ট খাবার বা পানীয়, যেমন চর্বিযুক্ত খাবার, মসলাযুক্ত খাবার, কফি বা অ্যালকোহল
- কিছু ওষুধ, যেমন অ্যান্টিকোলিনার্জিক ওষুধ বা অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ ওষুধ
- কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD), পেপটিক আলসার ডিজিজ (PUD) বা অগ্ন্যাশয়ের সমস্যা
বদহজম সাধারণত হালকা হয় এবং ঘরোয়া প্রতিকার বা ওষুধের মাধ্যমে চিকিত্সা করা যেতে পারে। তবে, দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর লক্ষণগুলির ক্ষেত্রে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায়
হজম শক্তি বৃদ্ধির জন্য নিম্নলিখিত উপায়গুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:
- খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া: খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খেলে পাচকরস ভালোভাবে নিঃসৃত হয় এবং খাবার দ্রুত হজম হয়।
- নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করা: নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করলে পেটের অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হজম প্রক্রিয়া ভালোভাবে হয়।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা: পানি পান করলে খাবার হজম হতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- প্রোটিন, ফাইবার, এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া: প্রোটিন, ফাইবার, এবং ক্যালসিয়াম হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে মাছ, মাংস, ডিম, এবং ডাল। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে শাকসবজি, ফল, এবং পুরো শস্য। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে দুধ, দই, এবং সয়াজাতীয় খাবার।
- খাদ্য অসহিষ্ণুতা বা অ্যালার্জি এড়ানো: কিছু লোক নির্দিষ্ট খাবারে অ্যালার্জি বা অসহিষ্ণুতা থাকতে পারে, যা হজমশক্তি দুর্বল করতে পারে। এই খাবারগুলি এড়ানো হলে হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা পাওয়া যেতে পারে।
- ধূমপান এবং মদ্যপান এড়ানো: ধূমপান এবং মদ্যপান হজমশক্তি দুর্বল করতে পারে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা: নিয়মিত ব্যায়াম করলে হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা পাওয়া যেতে পারে।
এখানে কিছু নির্দিষ্ট খাবার এবং পানীয়ের কথা বলা হল যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে:
- প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার এবং পানীয়: প্রোবায়োটিক হল উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে দই, কিমচি, এবং সাউরক্রাউট।
- হজম এনজাইম সমৃদ্ধ খাবার এবং পানীয়: হজম এনজাইম খাবার হজম করতে সাহায্য করে। হজম এনজাইম সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে লেবু, আদা, এবং পেঁপে।
- ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার এবং পানীয়: ক্যালসিয়াম হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে দুধ, দই, এবং সয়াজাতীয় খাবার।
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার এবং পানীয়: ফাইবার হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে শাকসবজি, ফল, এবং পুরো শস্য।
অন্যদিকে, হজমশক্তি দুর্বল করতে পারে এমন কিছু খাবার এবং পানীয়ের মধ্যে রয়েছে:
- তেলযুক্ত, ভাজা, এবং মশলাদার খাবার: এই খাবারগুলি হজম করতে কঠিন হতে পারে।
- অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার: অতিরিক্ত চিনি হজমশক্তি দুর্বল করতে পারে।
- অ্যালকোহল: অ্যালকোহল হজমশক্তি দুর্বল করতে পারে।
- কফি এবং চা: কফি এবং চা হজমশক্তি দুর্বল করতে পারে।
হজমশক্তি দুর্বল হলে উপরোক্ত উপায়গুলো অনুসরণ করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে। তবে, যদি হজমশক্তি দুর্বলতার সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা সাথে অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
খাবার ভালো হজমে সাহায্য করে কোনটি
ভালো হজমে সাহায্য করে এমন খাবারগুলো হলো:
- শাকসবজি: শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফাইবার খাদ্যের সাথে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলোকে শরীরে শোষণে সহায়তা করে। শাকসবজির মধ্যে পালং শাক, লাল শাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, গাজর, টমেটো, শসা, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ ইত্যাদি ভালো হজমে সাহায্য করে।
- ফলমূল: ফলমূলেও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এছাড়াও, ফলমূলে ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ফলমূলের মধ্যে কলা, আপেল, কমলা, লেবু, আঙ্গুর, তরমুজ, আনারস ইত্যাদি ভালো হজমে সাহায্য করে।
- টক দই: টক দয়ে থাকে প্রোবায়োটিক, যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রোবায়োটিক হলো ভালো ব্যাকটেরিয়া, যা পাকস্থলী ও অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। টক দই ছাড়াও, দই, মিষ্টি দই, পায়েস, লাচ্ছি ইত্যাদিও ভালো হজমে সাহায্য করে।
- আদা: আদা হজমে সহায়তা করে এবং গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। আদা চা, আদা দিয়ে রান্না করা খাবার, আদা গুঁড়া ইত্যাদি ভালো হজমে সাহায্য করে।
- পুদিনা: পুদিনা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং পেট ফাঁপার সমস্যা দূর করে। পুদিনা চা, পুদিনা দিয়ে রান্না করা খাবার, পুদিনা পাতা চিবিয়ে খাওয়া ইত্যাদি ভালো হজমে সাহায্য করে।
- লেবু: লেবুতে থাকে ভিটামিন সি, যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। লেবুর রস, লেবু দিয়ে রান্না করা খাবার, লেবু দিয়ে চা খাওয়া ইত্যাদি ভালো হজমে সাহায্য করে।
- হলুদ: হলুদ হজমে সহায়তা করে এবং পেটের ব্যথা ও অস্বস্তি কমায়। হলুদ চা, হলুদ দিয়ে রান্না করা খাবার, হলুদ গুঁড়া ইত্যাদি ভালো হজমে সাহায্য করে।
এছাড়াও, নিয়মিত পানি পান করা, ভাজাপোড়া, তেল-মসলাযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি খাদ্য পরিহার করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা ও মানসিক চাপ কমিয়ে রাখা ভালো হজমে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ পেটের গ্যাস কমানোর উপায়
দুধ হজম করতে কত সময় লাগে
দুধ হজম হতে সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ মিনিট সময় লাগে। তবে, ব্যক্তির বয়স, স্বাস্থ্যের অবস্থা, খাদ্যের পরিমাণ ও ধরন ইত্যাদির উপর নির্ভর করে এই সময় কম বা বেশি হতে পারে।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে, দুধ হজম হতে কম সময় লাগে। কারণ, বাচ্চাদের পাকস্থলীতে ল্যাকটেজ নামক এনজাইম বেশি থাকে, যা দুধের ল্যাকটোজ শর্করাকে ভাঙতে সাহায্য করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ল্যাকটেজ উৎপাদন হ্রাস পায়, ফলে দুধ হজম করতে বেশি সময় লাগে।
যারা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে দুধ হজম করতে বেশি সময় লাগে। কারণ, তাদের পাকস্থলীতে ল্যাকটেজ উৎপাদন হয় না বা খুব কম হয়। ফলে, দুধের ল্যাকটোজ শর্করা হজম হয় না এবং পেট ফাঁপা, ব্যথা, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
দুধের সাথে অন্যান্য খাবার খাওয়ার ফলেও দুধ হজম করতে সময় লাগতে পারে। কারণ, অন্যান্য খাবার পাকস্থলীতে থাকা ল্যাকটেজ এনজাইমকে বাধা দিতে পারে।
এছাড়াও, দুধের ধরনও দুধ হজমের সময়কে প্রভাবিত করতে পারে। যেমন, পূর্ণ দুধ হজম হতে কম সময় লাগে, যেখানে কম চর্বিযুক্ত বা ল্যাকটোজ-মুক্ত দুধ হজম হতে বেশি সময় লাগে।
তাই, দুধ হজম করতে কত সময় লাগে তা নির্ভর করে উপরোক্ত বিভিন্ন কারণের উপর।
পাঠকের মন্তব্য: