আখরোট কেন খাবেন? আখরোট এর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন।

আখরোট হল এক ধরনের বাদাম যা Juglans regia নামের গাছের ফল থেকে পাওয়া যায়। এটি আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্য প্রাচ্যের অনেক দেশে জন্মে। আখরোট একটি পুষ্টিকর খাবার যাতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

আখরোট কি

আখরোট একপ্রকার বাদাম জাতীয় ফল। এই ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর যাতে প্রচুর আমিষ এবং অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি আসিড আছে। এই ফলটি গোলাকার এবং ভেতরে একটি বীজ থাকে। পাকা ফলের বাইরের খোসা ফেলে দিলে ভেতরের শক্ত খোলসযুক্ত বীজটি পাওয়া যায়; এই খোলসের ভেতরে থাকে দুইভাগে বিভক্ত বাদাম যাতে বাদামি রঙের আবরন থাকে যা এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।

আখরোট গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Juglans regia যা জুগল্যান্ডাসি গোত্রের পর্ণমোচী বৃক্ষ। এই গাছ সাধারণতঃ ১০–৪০ মিটার (প্রায় ৩০–১৩০ ফুট) লম্বা হয়। এদের পালকের ন্যায় বহুধাবিভক্ত পাতা থাকে। পাতা সাধারণতঃ ২০০-৯০০ মিলিমিটার (৭–৩৫ ইঞ্চি) দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট। অনেকটা একই গোত্রের উইংনাট গাছের মত, কিন্তু কড়ই গাছের মত নয়। এই গণের লাতিন নাম Juglans য়ুগ্লান্স্‌ এসেছে Jovis glans য়ৌইস্‌ গ্লান্স্‌ যার অর্থ “জিউসের বাদাম”। বস্তত এই নাম দিয়ে আখরোটকে দেবভোগ্য বলে রূপায়িত করা হয়েছে।

আখরোটের পুষ্টিগুণ

আখরোটের পুষ্টিগুণ

আখরোট একটি পুষ্টিকর খাবার যা প্রোটিন, ফাইবার, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ই এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম আখরোটে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদানগুলি থাকে:

  • ক্যালোরি: 654
  • প্রোটিন: 15.2 গ্রাম
  • ফ্যাট: 65.2 গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট: 14.4 গ্রাম
  • ফাইবার: 6.7 গ্রাম
  • ভিটামিন ই: 25.5 মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম: 268 মিলিগ্রাম
  • পটাসিয়াম: 422 মিলিগ্রাম
  • ম্যাঙ্গানিজ: 2.4 মিলিগ্রাম
  • জিঙ্ক: 2.9 মিলিগ্রাম

আখরোট এর উপকারিতা

আখরোট এর উপকারিতা

আখরোট একটি স্বাস্থ্যকর খাবার যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। এটিতে প্রোটিন, ফাইবার, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

আখরোট এর উপকারিতাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে: আখরোটে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তচাপ কমাতে এবং রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে।
  • স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে: আখরোটে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কোষগুলিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ উন্নত করতেও সাহায্য করে।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে: আখরোটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে: আখরোটে থাকা ফাইবার রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে: আখরোট একটি পুষ্টিকর এবং পরিপূর্ণ খাবার যা ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে: আখরোটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে।
  • চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে: আখরোটে থাকা প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান চুলের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে।

আখরোট এর অপকারিতা

আখরোট একটি পুষ্টিকর খাবার হলেও এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। নিম্নলিখিত হল আখরোটের কিছু অপকারিতা:

  • অ্যালার্জি: আখরোট একটি বাদাম, তাই এতে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই আখরোট খাওয়ার আগে অ্যালার্জি পরীক্ষা করুন।
  • ওজন বৃদ্ধি: আখরোটে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি থাকে। তাই আখরোট বেশি খেলে ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকে।
  • লিভারের সমস্যা: আখরোটে থাকা কিছু উপাদান লিভারের সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই লিভারের সমস্যা থাকলে আখরোট খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
  • আয়রনের ঘাটতি: কালো আখরোটে থাকা ফাইটেটস শরীরের আয়রন শুষে নিতে পারে। ফলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা যেতে পারে।

নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের আখরোট খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত:

  • যারা অ্যালার্জিতে ভোগেন।
  • যারা ওজন বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
  • যারা লিভারের সমস্যায় ভোগেন।
  • যারা আয়রনের ঘাটতিতে ভোগেন।

সামগ্রিকভাবে, আখরোট একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। তবে, পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

আখরোট খাওয়ার নিয়ম

আখরোট খাওয়ার নিয়ম

আখরোট খাওয়ার নিয়ম নিম্নরূপ:

  • আখরোট খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নিন।
  • আখরোটকে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে পারেন। এতে আখরোটের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায় এবং হজমও সহজ হয়।
  • আখরোটকে কাঁচা, ভাজা, বা লবণ দিয়ে খেতে পারেন।
  • আখরোটকে সকালের নাস্তায়, বাদাম মিশ্রণে, ফলের সালাদ বা অন্যান্য খাবারের সাথে খেতে পারেন।

আখরোট খাওয়ার কিছু টিপস:

  • প্রতিদিন 1-2 আখরোট খাওয়া একটি ভাল লক্ষ্য।
  • আখরোট বেশি খেলে ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকে।
  • আখরোট একটি বাদাম, তাই এতে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই আখরোট খাওয়ার আগে অ্যালার্জি পরীক্ষা করুন।

আখরোট খাওয়ার কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা:

  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
  • স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
  • চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।

সুতরাং, নিয়মিত আখরোট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।

আরো পড়ুন ঃ আনারসের উপকারিতা

প্রতিদিন কতটুকু আখরোট খেলে ওমেগা ৩ পাওয়া যায়?

প্রতিদিন 1-2 আখরোট খেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের দৈনিক চাহিদা পূরণ হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম আখরোটে প্রায় ৬.৭ গ্রাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। তাই, প্রতিদিন ১-২ আখরোট (যেখানে প্রতি আখরোট প্রায় ১৫ গ্রাম) খেলে দৈনিক প্রয়োজনীয় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ হয়।

তবে, আখরোটে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি থাকে। তাই, ওজন বৃদ্ধির ভয় থাকলে প্রতিদিন ১ আখরোট খাওয়াই যথেষ্ট।

আখরোট ছাড়াও, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অন্যতম ভালো উৎস হল স্যামন, মাছ, তিসির বীজ, চিয়া সিড ইত্যাদি।

আখরোট কিভাবে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়?

নিয়মিত আখরোট খেলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়।

আখরোট খেলে ভালো ফল পেতে হলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে:

  • পরিমাণ: দিনে ৭-১০টি আখরোট খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে, যদি আপনার কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আখরোট খাওয়া উচিত।
  • সময়: সকালে খালি পেটে আখরোট খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। কারণ, এই সময় শরীরের পুষ্টির চাহিদা বেশি থাকে। তবে, আপনি চাইলে দিনের যেকোনো সময় আখরোট খেতে পারেন।
  • প্রক্রিয়াজাতকরণ: অপরিশোধিত আখরোট বেশি উপকারী। কারণ, প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় আখরোটের কিছু পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • সুষম খাদ্যের সাথে: আখরোট একটি সুপারফুড হলেও, এটি একমাত্র খাবার নয়। তাই, আখরোটকে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের সাথে মিলিয়ে খেতে হবে।

আখরোট বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। আপনি চাইলে এটিকে সরাসরি খেতে পারেন। এছাড়াও, আপনি এটিকে সালাদ, স্যান্ডউইচ, বা দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

পাঠকের মন্তব্য:

Check Also

ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

ছোলা খাওয়ার উপকারিতা: ছোলা কেন আপনার খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত কাঁচা?

ছোলা বাঙালির খাদ্যতালিকার একটি অপরিহার্য অংশ। বিশেষ করে রোজার মাসে ইফতারের পাতে ছোলা থাকতেই হবে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *