কাঠ বাদাম এর উপকারিতা অপরিসীম। কাঠবাদাম একটি বাদামজাতীয় খাবার যা প্রোটেইন, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানের একটি ভালো উৎস। এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাদামগুলির মধ্যে একটি এবং বিভিন্ন ধরণের খাবারে ব্যবহৃত হয়।
কাঠবাদাম খেতে কমবেশি সবাই খুব ভালোবাসে। তবে অনেকে মনে করেন কাঠবাদাম ওজন বাড়িয়ে দেয়। আসলে আপনি জানেন কি, নিয়মিত কাঠবাদাম উল্টো ডায়েটে আপনার ওজন কমাতে সহায়তা করে। কাঠবাদাম স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়ার জন্য অত্যন্ত চমৎকার একটি খাবার।
Table of Contents
কাঠবাদামের পুষ্টিগুণ
কাঠ বাদামে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে। প্রতি ১ আউন্স (২৮ গ্রাম) কাঠ বাদামে রয়েছে:
- প্রোটিন: 6 গ্রাম
- ফাইবার: 4 গ্রাম
- ভিটামিন ই: 15 মিলিগ্রাম (RDA এর 100%)
- ম্যাগনেসিয়াম: 75 মিলিগ্রাম (RDA এর 20%)
- ফসফরাস: 260 মিলিগ্রাম (RDA এর 32%)
- থিয়ামিন: 1 মিলিগ্রাম (RDA এর 10%)
- রাইবোফ্লাভিন: 0.2 মিলিগ্রাম (RDA এর 8%)
- নিয়াসিন: 2 মিলিগ্রাম (RDA এর 13%)
- প্যানটোথেনিক অ্যাসিড: 1 মিলিগ্রাম (RDA এর 5%)
- ভিটামিন বি৬: 0.1 মিলিগ্রাম (RDA এর 5%)
কাঠ বাদাম এর উপকারিতা
আপনি জানেন কি? কাঠ বাদাম খেলে কি উপকার পাওয়া যায়? কাঠ বাদামে রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। কাঠ বাদাম এর উপকারিতাগুলি নিম্নরূপ:
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: কাঠ বাদামে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও, কাঠবাদামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি রক্তনালীগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়: কাঠ বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত করে। এছাড়াও, কাঠবাদামে থাকা ফাইবার রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- ওজন কমাতে সাহায্য করে: কাঠ বাদামে থাকা প্রোটিন এবং ফাইবার ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, কাঠবাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।
- ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে: কাঠ বাদামে থাকা ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও, কাঠবাদামে থাকা ফ্যাট ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।
- চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে: কাঠ বাদামে থাকা প্রোটিন চুলের বৃদ্ধি এবং ঘনত্ব উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, কাঠবাদামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি চুলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
- মস্তিস্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে: কাঠ বাদামে থাকা ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি মস্তিস্কের কোষগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও, কাঠবাদামে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিস্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
- গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী: কাঠ বাদামে থাকা প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজগুলি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারী। এটি গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্য এবং শিশুর বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
কাঠ বাদাম একটি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস। এটি নিয়মিত খেলে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমানো এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি করা সম্ভব।
আরো পড়ুন ঃ চিয়া সিড এর উপকারিতা
কাঠ বাদাম খাওয়ার অপকারিতা
কাঠবাদাম যদিও একটি পুষ্টিকর খাবার যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারিতা প্রদান করে। তবে, অতিরিক্ত পরিমাণে কাঠবাদাম খাওয়া কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ ও হতে পারে।
কাঠবাদাম খাওয়ার অপকারিতাগুলি হল:
- অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ: কাঠ বাদামে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি থাকে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে কাঠবাদাম খেলে ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- অতিরিক্ত চর্বি গ্রহণ: কাঠ বাদামে প্রচুর পরিমাণে চর্বি থাকে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে কাঠবাদাম খেলে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত ফাইবার গ্রহণ: কাঠ বাদামে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে কাঠবাদাম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
- অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া: কাঠ বাদামে অ্যালার্জির উপাদান থাকতে পারে। তাই যাদের কাঠবাদামে অ্যালার্জি রয়েছে তাদের কাঠবাদাম এড়িয়ে চলা উচিত।
- কিডনিতে পাথর: কাঠ বাদামে অক্সালেট নামক একটি উপাদান থাকে যা কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে। তাই যাদের কিডনিতে পাথর রয়েছে তাদের কাঠবাদাম এড়িয়ে চলা উচিত।
কাঠ বাদাম খাওয়ার সঠিক মাত্রা:
একজন প্রাপ্তবয়স্কের জন্য প্রতিদিন 28 গ্রাম কাঠবাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে, যাদের ওজন বেশি, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল বা হৃদরোগ রয়েছে তাদের জন্য কাঠবাদাম খাওয়ার পরিমাণ কমানো উচিত।
কাঠবাদাম খাওয়ার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত:
- কাঠ বাদাম খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া উচিত।
- কাঠ বাদাম বাদাম ভাজার আগে ভালো করে শুকিয়ে নেওয়া উচিত।
- কাঠ বাদাম ভাজার সময় বেশি তাপে ভাজা উচিত নয়।
- কাঠ বাদাম ঠান্ডা হওয়ার পরই সংরক্ষণ করা উচিত।
কাঠবাদাম একটি পুষ্টিকর খাবার হলেও অতিরিক্ত পরিমাণে কাঠবাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই কাঠ বাদাম খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম
কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম নিম্নরূপ:
- কাঠ বাদাম খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নিন।
- কাঠ বাদাম কাঁচা, ভাজা বা চূর্ণ করে খাওয়া যেতে পারে।
- কাঠ বাদাম সালাদ, স্যুপ, স্মুদি, ডেজার্ট এবং অন্যান্য খাবারগুলিতে যোগ করা যেতে পারে।
- প্রতিদিন 28 থেকে 56 গ্রাম কাঠবাদাম খাওয়া নিরাপদ বলে মনে করা হয়। এটি প্রায় 12 থেকে 24 টি কাঠ বাদামের সমান।
কাঠবাদাম খাওয়ার কিছু টিপস:
- কাঠবাদাম ভিজিয়ে খাওয়া ভালো। ভিজিয়ে রাখলে কাঠবাদামের পুষ্টিগুণ বেড়ে যায়।
- কাঠবাদামকে লবণ বা মশলা দিয়ে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে কাঠবাদামের পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে।
- কাঠবাদামকে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন। এতে আপনি কাঠবাদামের স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারবেন।
কাঠবাদামের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
- কাঠবাদামে অ্যালার্জি হতে পারে। কাঠবাদামে অ্যালার্জি থাকলে, এটি খাওয়া এড়ানো উচিত।
- কাঠবাদামে ক্যালোরি এবং চর্বিও বেশি থাকে। তাই এগুলিকে পরিমিতভাবে খাওয়া উচিত।
কাঠবাদাম সংরক্ষণ করবেন যেভাবে
কাঠবাদাম সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
কাঠবাদাম সংরক্ষণের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত:
- কাঠবাদামকে শুষ্ক এবং অন্ধকার স্থানে রাখুন। বাতাস এবং আলো কাঠবাদামের স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ নষ্ট করতে পারে।
- কাঠবাদামকে ঠান্ডা স্থানে রাখুন। উচ্চ তাপমাত্রায় কাঠবাদাম নরম হয়ে যেতে পারে এবং তার স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- কাঠবাদামকে বায়ুরোধী পাত্রে রাখুন। বাতাস বা পোকামাকড় কাঠবাদামে প্রবেশ করলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
কাঠবাদামকে দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণ করতে চাইলে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করতে পারেন:
- কাঠবাদামকে খোসাসহ রাখুন। খোসা ছাড়ানো কাঠবাদাম দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
- কাঠবাদামকে রুমের তাপমাত্রায় রাখুন। কাঠবাদামকে রুমের তাপমাত্রায় রাখলে এটি তিন মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে।
- কাঠবাদামকে ফ্রিজে রাখুন। কাঠবাদামকে ফ্রিজে রাখলে এটি ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে।
- কাঠবাদামকে ডিপ ফ্রিজে রাখুন। কাঠবাদামকে ডিপ ফ্রিজে রাখলে এটি এক বছর পর্যন্ত ভালো থাকবে।
কাঠবাদাম সংরক্ষণের সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত:
- কাঠবাদামকে সংরক্ষণ করার আগে ভালো করে শুকিয়ে নিন। ভেজা কাঠবাদাম নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- কাঠবাদামকে সংরক্ষণ করার আগে তার উপর তারিখ লিখে রাখুন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন যে কাঠবাদাম কতদিন ধরে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
সঠিকভাবে কাঠবাদাম সংরক্ষণ করলে আপনি এর স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ দীর্ঘদিন ধরে উপভোগ করতে পারবেন।
কাঠ বাদাম খেলে কি ওজন বাড়ে?
কাঠ বাদাম একটি পুষ্টিকর খাবার যা প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরিও রয়েছে। তাই অনেকেই মনে করেন যে কাঠ বাদাম খেলে ওজন বাড়ে।
তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে কাঠ বাদাম খেলে ওজন বাড়ে না, বরং ওজন কমাতে সাহায্য করে। কাঠ বাদাম খেলে ক্ষুধা কমে যায় এবং শরীরের মেটাবলিজম বাড়ে। ফলে খাবার কম খাওয়া হয় এবং ওজন কমে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত কাঠ বাদাম খেয়েছেন তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে বেশি সফল হয়েছেন। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত কাঠ বাদাম খেয়েছেন তাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমেছে এবং হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমেছে।
কাঠ বাদাম খেলে ওজন বাড়ে কিনা তা নির্ভর করে সেটি কতটুকু খাওয়া হয় তার উপর। অতিরিক্ত পরিমাণে কাঠ বাদাম খেলে ওজন বাড়তে পারে। তাই প্রতিদিন ১০-১২টি কাঠ বাদাম খাওয়াই ভালো।
যারা ওজন কমাতে চান তারা কাঠ বাদাম খেতে পারেন। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে না খাওয়াই ভালো।
পাঠকের মন্তব্য: