বাসক পাতা হলো একধরণের ভেষজ পাতা যা ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় শতাব্দী ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। এগুলি Justicia adhatoda গাছ থেকে আসে, যা ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্থানীয় একটি ছোট গাছ। পাতাগুলি গাঢ় সবুজ এবং লম্বাটে, সুগন্ধযুক্ত তেলের একটি তীব্র গন্ধ রয়েছে।
Table of Contents
বাসক পাতা কি?
বাসক পাতা, যা মলাবার নট নামেও পরিচিত, ঔষধি গুণসম্পন্ন এক অপূর্ব ভেষজ। Justicia adhatoda বৈজ্ঞানিক নামের এই গাছটি ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে জন্মে। বাসক পাতা দীর্ঘকাল ধরে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে।
বাসক পাতার বৈশিষ্ট্য
উদ্ভিদ:
- বাসক একটি ছোট, চিরহরিৎ গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ।
- এর আদিনিবাস আফ্রিকা ও এশিয়ার উষ্ণ অঞ্চল।
- বাসকের ইংরেজি নাম: Vasaka, Malabar Nut tree।
- পরিবার: Acanthaceae।
- উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম: Adhatoda zeylanica Medik.
পাতা:
- বাসকের পাতা বড়, ঘন, সবুজ রঙের এবং লম্বাটে।
- পাতার স্পষ্ট শিরা-উপশিরা থাকে।
- পাতা থেকে তীব্র সুগন্ধযুক্ত তেলের গন্ধ আসে।
- পাতায় “ভার্সিনিন” নামক ক্ষারীয় পদার্থ এবং তেল থাকে।
বাসক পাতার ঔষধি গুণ
বাসক পাতার ঔষধি গুণ:
- শ্বাসনালীর সমস্যা: বাসক পাতা শ্লেষ্মা তরল করে বের করতে সাহায্য করে। তাই এটি সর্দি, কাশি, ব্রংকাইটিস, হাঁপানি ইত্যাদি শ্বাসনালীর সমস্যায় উপকারী।
- জ্বর: বাসক পাতায় অ্যান্টিপাইরেটিক গুণ রয়েছে যা জ্বর কমাতে সাহায্য করে।
- পেটের সমস্যা: বাসক পাতা অম্বল, পেট খারাপ, ডায়রিয়া ইত্যাদি পেটের সমস্যায় উপকারী।
- ত্বকের সমস্যা: বাসক পাতায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণ রয়েছে যা ত্বকের সংক্রমণ, ব্রণ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি ত্বকের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
- অন্যান্য গুণ: বাসক পাতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
বাসক পাতার উপকারিতা
বাসক পাতা ঔষধি গুণসম্পন্ন এক অপূর্ব ভেষজ। এটি ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে জন্মে। দীর্ঘকাল ধরে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে।
বাসক পাতার কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা:
শ্বাসকষ্টের সমস্যা:
- বাসক পাতা একটি শক্তিশালী এক্সপেক্টোরেন্ট। এটি শ্লেষ্মা আলগা করতে এবং কাশি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
- এছাড়াও, এটি শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস,
অ্যালার্জি:
- বাসক পাতায় অ্যান্টিহিস্টামাইন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি অ্যালার্জির লক্ষণগুলি হ্রাস করতে সাহায্য করে, যেমন ছিঁকানি, চোখ জ্বালা এবং সর্দি।
সংক্রমণ:
- বাসক পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
- এছাড়াও, এটি ভাইরাল সংক্রমণ, যেমন সর্দি এবং ফ্লুর উপসর্গগুলি হ্রাস করতেও সাহায্য করে।
প্রদাহ:
বাসক পাতায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি গেঁটেবাত, সন্ধিবাত এবং আর্থারাইটিসের মতো অবস্থার কারণে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
অন্যান্য উপকারিতা:
- বাসক পাতা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং ক্যান্সারের মতো অন্যান্য স্বাস্থ্যের অবস্থার চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা
- ত্বকের যত্নে
- চুলের যত্নে
- মুখের যত্নে
আরো পড়ুন ঃ
বাসক পাতা ব্যবহারের পদ্ধতি
বাসক পাতা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি হল:
চা তৈরি:
- উপকরণ:
- 2-3 টা শুকনো বাসক পাতা
- 1 কাপ পানি
- 1 চা চামচ মধু (ঐচ্ছিক)
- পদ্ধতি:
- পানি ফুটিয়ে নিন।
- ফুটন্ত পানিতে বাসক পাতা ছেড়ে দিন।
- 5-10 মিনিট ঢেকে রাখুন।
- চা ছেঁকে গরম গরম পান করুন।
- স্বাদ অনুযায়ী মধু যোগ করতে পারেন।
ক্যাপসুল:
- বাজারে বাসক পাতার গুঁড়ো ক্যাপসুল আকারে পাওয়া যায়।
- ক্যাপসুলের প্যাকেটে দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী সেবন করুন।
তরল নির্যাস:
- বাজারে বাসক পাতার তরল নির্যাস পাওয়া যায়।
- নির্যাসের বোতলে দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী সেবন করুন।
স্থানীয় প্রয়োগ:
- বাসক পাতার রস ত্বকের ক্রিম বা মলম হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
- পদ্ধতি:
- কিছুটা বাসক পাতা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
- পাতা নরম হলে পানি থেকে তুলে পেস্ট তৈরি করুন।
- প্রদাহযুক্ত স্থানে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন।
বাসক পাতার অপকারিতা
বাসক পাতা ঔষধি গুণসম্পন্ন হলেও অতিরিক্ত ব্যবহারে কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে।
সম্ভাব্য অপকারিতা গুলি হল:
1. পেটের সমস্যা:
- অতিরিক্ত বাসক পাতা গ্রহণের ফলে পেট খারাপ, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া এবং পেটে ব্যথা হতে পারে।
2. মাথাব্যথা:
- কিছু লোকের বাসক পাতা গ্রহণের ফলে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে।
3. অ্যালার্জি:
- কিছু লোকের বাসক পাতার প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে। অ্যালার্জির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে চুলকানি, ফুসকুড়ি এবং শ্বাসকষ্ট।
4. গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলা:
- গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের বাসক পাতা গ্রহণ করা উচিত নয়।
5. অন্যান্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া:
- যারা অন্য কোনও ওষুধ খাচ্ছেন তারা বাসক পাতা ব্যবহারের পূর্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
বাসক পাতা ব্যবহারের পূর্বে সতর্কতা:
- ডাক্তারের পরামর্শ: বাসক পাতা ব্যবহারের পূর্বে একজন ডাক্তার বা ভেষজ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা সবচেয়ে নিরাপদ।
- পরিমিত ব্যবহার: বাসক পাতা অতিরিক্ত ব্যবহার করা উচিত নয়।
- অ্যালার্জি পরীক্ষা: বাসক পাতা ব্যবহারের পূর্বে অ্যালার্জি পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
- কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে: বাসক পাতা ব্যবহারের ফলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তা অবিলম্বে বন্ধ করে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম
বাসক পাতার রস বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে উপকারী। তবে সঠিক নিয়মে না খেলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়ম:
১. পরিমাণ:
- প্রতিদিন সকালে খালি পেটে 10-15 মিলি বাসক পাতার রস খাওয়া যেতে পারে।
- শিশুদের ক্ষেত্রে 5-10 মিলি বাসক পাতার রস খাওয়ানো যেতে পারে।
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের বাসক পাতার রস খাওয়া উচিত নয়।
২. তৈরি করার পদ্ধতি:
- কয়েকটি বাসক পাতা ভালো করে ধুয়ে পানিতে ফুটিয়ে নিন।
- পানি ঠান্ডা হলে পাতা থেকে রস বের করে নিন।
- মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
৩. খাওয়ার সময়:
- খালি পেটে বাসক পাতার রস খাওয়া সবচেয়ে ভালো।
- খাবারের পর খেলে পেট খারাপ হতে পারে।
৪. সতর্কতা:
- অ্যালার্জি পরীক্ষা: বাসক পাতার রস খাওয়ার পূর্বে অ্যালার্জি পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: বাসক পাতার রস খাওয়ার ফলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তা অবিলম্বে বন্ধ করে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
মনে রাখবেন: বাসক পাতার রস ঔষধি গুণসম্পন্ন হলেও অতিরিক্ত ব্যবহারে কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্যের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে।
বাসক পাতার রস খাওয়ার পূর্বে একজন ডাক্তার বা ভেষজ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা সবচেয়ে নিরাপদ।
পাঠকের মন্তব্য: