বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি, অল্প খরচে বেশি লাভ

বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি একটি লাভজনক এবং সহজ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে যে কোন পরিত্যাক্ত জায়গা, বসত বাড়ির চারদিকে ফাঁকা জায়গা, লবনাক্ত এলাকা, বাড়ির ছাদে সহজেই চাষ করা যায়। এ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ অনেক কম। প্রতি বস্তায় ২০-২৫ টাকা খরচ করে বস্তা প্রতি ১-২ কেজি আদা উৎপাদন করা যায়।

বস্তায় আদা চাষের উপকরণ

  • বড় আকারের প্লাস্টিকের বস্তা
  • পচা গোবর সার
  • টিএসপি সার
  • এমওপি সার
  • উচ্চ ফলনশীল আদা বীজ
  • ফিউরাডন

বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি

বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি

১. প্রথমে বস্তাটি ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।

২. এরপর বস্তায় তিন ঝুড়ি মাটি, এক ঝুড়ি পচা গোবর সার এবং ২৫ গ্রাম ফিউরাডন ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।

৩. এরপর বস্তায় ৩০-৩৫ সেন্টিমিটার গভীরতায় ছিদ্র করুন।

৪. ছিদ্রের মাঝখানে একটি করে আদা বীজ বসিয়ে দিন।

৫. এরপর ছিদ্রের মাটি দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে দিন। বস্তায় আদা চাষের জন্য আদা বীজ বসানো

৬. বস্তায় পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যেন অতিরিক্ত পানি না থাকে।

৭. আদা চাষের জন্য উষ্ণ আবহাওয়া উপযুক্ত। তাই বস্তায় আদা চাষের জন্য এপ্রিল-মে মাসে বীজ বপন করতে হয়।

আরও পড়ুন ঃ মাশরুম চাষ পদ্ধতি

বস্তায় আদা চাষের পরিচর্যা

বস্তায় আদা চাষের পরিচর্যা নিম্নরূপ:

  • পানি সেচ: আদা চাষের জন্য নিয়মিত পানি সেচ প্রয়োজন। মাটি শুকিয়ে গেলে পানি সেচ দিতে হবে। তবে অতিরিক্ত পানি দেওয়া যাবে না।
  • আগাছা পরিষ্কার: আদা চাষের ক্ষেত্রে আগাছা পরিষ্কার করা জরুরি। আগাছা আদার পুষ্টি উপাদান শোষণ করে নেয়। তাই আগাছা দেখা দিলে তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
  • সার প্রয়োগ: আদা চাষের জন্য নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। আদা চাষের জন্য প্রতি বস্তায় ১ কেজি গোবর সার, ৫০ গ্রাম টিএসপি সার এবং ৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের আগে মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
  • রোগবালাই দমন: আদা চাষে রোগবালাইয়ের আক্রমণ হতে পারে। তাই রোগবালাই দেখা দিলে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।

বস্তায় আদা চাষের ক্ষেত্রে এই পরিচর্যাগুলো ভালোভাবে পালন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

বস্তায় আদা চাষের কিছু টিপস:

  • বস্তায় আদা চাষের জন্য ভালো মানের প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করতে হবে। বস্তাটি ভালোভাবে ছিদ্র করা থাকতে হবে।
  • আদা চাষের জন্য উঁচু জায়গা নির্বাচন করতে হবে।
  • আদা রোপণের আগে বস্তায় মাটি ভালোভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
  • আদা রোপণের পর নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে।
  • আগাছা দেখা দিলে তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
  • সার প্রয়োগের আগে মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
  • রোগবালাই দেখা দিলে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।

বস্তায় আদা চাষের ফলন

বস্তায় আদা চাষের ফলন মাটির উর্বরতা, পরিচর্যার মান এবং আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। সাধারণত প্রতি বস্তায় ১ থেকে ২ কেজি আদা পাওয়া যায়। তবে ভালো পরিচর্যার মাধ্যমে প্রতি বস্তায় ৩ থেকে ৪ কেজি আদা পাওয়া সম্ভব।

বস্তায় আদা চাষের ক্ষেত্রে ফলন বাড়াতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে:

  • উর্বর মাটি ব্যবহার করা।
  • নিয়মিত পানি সেচ দেওয়া।
  • আগাছা পরিষ্কার করা।
  • সার প্রয়োগ করা।
  • রোগবালাই দমন করা।

বস্তায় আদা চাষ একটি লাভজনক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কম খরচে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

বস্তায় আদা চাষের সুবিধা

বস্তায় আদা চাষের অনেক সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

  • যে কোন পরিত্যাক্ত জায়গায় চাষ করা যায়: বস্তায় আদা চাষের জন্য আলাদা করে জমির দরকার নেই। তাই যে কোন পরিত্যাক্ত জায়গা, বসত বাড়ির চারদিকে ফাঁকা জায়গা, লবনাক্ত এলাকা, বাড়ির ছাদে সহজেই চাষ করা যায়।
  • একই জায়গায় বারবার চাষ করা যায়: বস্তায় আদা চাষের ক্ষেত্রে মাটিতে কোনো পরিবর্তন হয় না। তাই একই জায়গায় বারবার চাষ করা যায়।
  • উৎপাদন খরচ কম: বস্তায় আদা চাষের জন্য আলাদা করে জমি প্রস্তুত করার প্রয়োজন হয় না। তাই উৎপাদন খরচ অনেক কম।
  • কন্দ পঁচা রোগ হয় না: বস্তায় আদা চাষ করলে মাটি বা পানিবাহিত রোগের আক্রমণ কম হয়। তাই কন্দ পঁচা রোগ হয় না।
  • নিড়ানীসহ অন্যান্য পরিচর্যার তেমন দরকার হয় না: বস্তায় আদা চাষের ক্ষেত্রে মাটির গভীরতা কম থাকে। তাই নিড়ানীসহ অন্যান্য পরিচর্যার তেমন দরকার হয় না।

বস্তায় আদা চাষের এই সুবিধাগুলোর কারণে এটি একটি লাভজনক এবং সহজ পদ্ধতি।

বস্তায় আদা চাষের অসুবিধা

বস্তায় আদা চাষের সুবিধা যেমন রয়েছে তেমনি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

  • বড় আকারের বস্তা দরকার হয়: বস্তায় আদা চাষের জন্য বড় আকারের বস্তা দরকার হয়। তাই এটি অনেকের জন্য ব্যয়বহুল হতে পারে।
  • নিয়মিত পানি দেওয়া এবং আগাছা পরিষ্কার করা জরুরি: বস্তায় আদা চাষের ক্ষেত্রে নিয়মিত পানি দেওয়া এবং আগাছা পরিষ্কার করা জরুরি। তাই এটি অনেক সময়সাপেক্ষ হতে পারে।

বস্তায় আদা চাষের এই অসুবিধাগুলোর কারণে এটি একটি সম্পূর্ণ নিখুঁত পদ্ধতি নয়। তবে এটি একটি লাভজনক এবং সহজ পদ্ধতি।

কোন মাটিতে আদা চাষ ভালো হয়?

কোন মাটিতে আদা চাষ ভালো হয়

আদা চাষের জন্য উঁচু, পানি নিকাশের সুব্যবস্থা সম্পন্ন, জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ, দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ বা বেলে মাটি উপযুক্ত।

আদা চাষের জন্য মাটির পিএইচ ৫.৫ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে হওয়া উচিত। মাটির পিএইচ কম হলে সার প্রয়োগ করে পিএইচ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। আদা চাষের জন্য মাটির তাপমাত্রা ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকা উচিত।

আদা চাষের জন্য মাটি প্রস্তুত করার সময় প্রতি শতকে ১০ টন গোবর সার, ৫০ কেজি টিএসপি সার এবং ৫০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।

আদা কি মাসে রোপণ করা হয়?

বাংলাদেশে আদা সাধারণত ফাল্গুন থেকে বৈশাখ মাস (মার্চ থেকে মে মাস) পর্যন্ত রোপণ করা হয়। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ আদা রোপণের উপযুক্ত সময়। আদা রোপণের জন্য ৪০-৪৫ সে.মি. দূরে দূরে সারি করে ২০ সে.মি. দূরে ৫ সে.মি. গভীরে আদা লাগানো হয়। কন্দ লাগানো পর ভেলী করে দিতে হয়।

বাংলাদেশের আবহাওয়ায় আদা লাগানোর পর ৯-১০ মাস পর আদা তোলার উপযোগী হয়। সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে আদা উত্তোলন করা হয়।

আদা বীজ কোথায় পাবো?

আদা বীজ আপনি নিচের স্থানগুলো থেকে সংগ্রহ করতে পারেন:

  • কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বীজ বিক্রয় কেন্দ্র: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বীজ বিক্রয় কেন্দ্র থেকে আপনি আদা বীজ সংগ্রহ করতে পারেন। এই কেন্দ্রগুলো সাধারণত জেলা শহরের কৃষি অফিসের পাশে অবস্থিত।
  • কৃষিবিদদের কাছ থেকে: আপনার এলাকার কৃষিবিদদের কাছ থেকেও আপনি আদা বীজ সংগ্রহ করতে পারেন। তারা আপনাকে ভালো মানের আদা বীজ সংগ্রহে সাহায্য করতে পারবেন।
  • কৃষি বাজার থেকে: কৃষি বাজার থেকেও আপনি আদা বীজ সংগ্রহ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে বীজের মান ভালো কিনা তা ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিতে হবে।

আদা বীজ সংগ্রহের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে:

  • বীজ ভালোভাবে পরিপক্ব হওয়া উচিত।
  • বীজের আকার বড় হওয়া উচিত।
  • বীজে কোনো ক্ষত বা দাগ থাকা উচিত নয়।

আদা বীজ সংরক্ষণের জন্য আপনি নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন:

  • বীজকে কোনো শুষ্ক এবং ঠান্ডা জায়গায় রাখুন।
  • বীজকে কোনো কাগজের বা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে রাখুন।
  • বীজের ব্যাগকে কোনো বাক্সে ভরে রাখুন।

আদা বীজ সংরক্ষণের সময় বীজকে কোনোভাবেই আর্দ্র হতে দেবেন না।

উপসংহার

বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি একটি লাভজনক এবং সহজ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে যে কোন পরিত্যাক্ত জায়গা, বসত বাড়ির চারদিকে ফাঁকা জায়গা, লবনাক্ত এলাকা, বাড়ির ছাদে সহজেই চাষ করা যায়। এ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ অনেক কম।

পাঠকের মন্তব্য:

Check Also

ধুন্দল এর উপকারিতা

ধুন্দল এর উপকারিতা, রোগ-বালাই দমন ও চাষ পদ্ধতি

ধুন্দল একটি জনপ্রিয় সবজি যা সারা বাংলাদেশে চাষ করা হয়। এটি একটি উষ্ণমণ্ডলীয় উদ্ভিদ যা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *