ছোলা বাঙালির খাদ্যতালিকার একটি অপরিহার্য অংশ। বিশেষ করে রোজার মাসে ইফতারের পাতে ছোলা থাকতেই হবে। এছাড়াও সারাবছর ঘরে কিংবা বাইরে ছোলা বিভিন্ন রূপে খাওয়া হয়। মুড়ি মাখায়, সকালের নাস্তা হিসেবে ভেজানো কাঁচা ছোলা – সবখানেই ছোলার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
Table of Contents
ছোলা কি?
ছোলা হচ্ছে এক ধরণের ডালজাতীয় খাদ্যশস্য যা “Cicer arietinum” নামক বৈজ্ঞানিক নামে পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম এশিয়া এবং ভারতীয় উপমহাদেশে এটি বহুল পরিমাণে চাষ করা হয়। ছোলা খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। কাঁচা ছোলায় বিদ্যমান ভিটামিন-বি বেরিবেরি রোগ, মস্তিষ্কের রোগ, এবং হৃৎপিণ্ডের দুর্বলতার বিরুদ্ধে কাজ করে। এছাড়াও এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।
ছোলার বৈশিষ্ট্য
ছোলা হলো এক ধরনের ডালজাতীয় খাদ্যশস্য যা “Cicer arietinum” নামক বৈজ্ঞানিক নামে পরিচিত। এটি মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম এশিয়া এবং ভারতীয় উপমহাদেশে বহুল পরিমাণে চাষ করা হয়।
ছোলার কিছু বৈশিষ্ট্য:
- প্রোটিনে সমৃদ্ধ: ছোলা আমিষের একটি চমৎকার উৎস। এতে প্রায় ২০-২৫% প্রোটিন থাকে, যা মাংসের তুলনায় কম খরচে পাওয়া যায়।
- পুষ্টিকর: ছোলায় প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ, ভিটামিন (বি, এ, সি), খনিজ পদার্থ (আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
- বহুমুখী: ছোলা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের খাবার তৈরি করা যায়, যেমন তরকারি, ভুনা, ঝাল, ফালাফেল, হুমাস, বেগুনী, পিঁয়াজি, ইত্যাদি।
- স্বাস্থ্য উপকারিতা: ছোলা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, ওজন কমানো, এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ছোলা সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য:
- দুটি প্রধান প্রকারের ছোলা: দেশী ছোলা এবং কাবুলি ছোলা।
- বিভিন্ন রঙের ছোলা: বাদামী, কালো, সাদা, এবং লাল।
- ছোলার বীজ থেকে তৈরি: ছোলার বেসন, ছোলার ডাল, এবং ছোলার লুচি।
ছোলার পুষ্টিগুণ
ছোলা প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সহ বিভিন্ন পুষ্টির একটি ভাল উৎস। এগুলি ভিটামিন বি-এরও একটি ভাল উৎস।
পুষ্টির তথ্য
এখানে 1 কাপ শুকনো ছোলার (164 গ্রাম) পুষ্টির তথ্য রয়েছে:
- ক্যালোরি: 269
- প্রোটিন: 19 গ্রাম
- ফাইবার: 13 গ্রাম
- আয়রন: 5 মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম: 488 মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম: 88 মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি-6: 0.2 মিলিগ্রাম
- থায়ামিন: 0.4 মিলিগ্রাম
- ফোলেট: 400 মাইক্রোগ্রাম
ছোলা বুটের উপকারিতা কি?
ছোলা একটি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার যা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এটি প্রোটিন, খাদ্য আঁশ, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের একটি ভালো উৎস।
ছোলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো হল:
1. হজম উন্নত করে:
ছোলা বুটে থাকা ফাইবার হজম উন্নত করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। এটি প্রোবায়োটিকের জন্য খাদ্যও সরবরাহ করে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং নিয়মিত মলত্যাগে সহায়তা করে।
2. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে:
ছোলা বুটে থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে। গ্লুকোজের শোষণ ধীর করে। এটি টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বা এর ঝুঁকিতে থাকা লোকদের জন্য উপকারী হতে পারে।
3. হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য উন্নত করে:
ছোলা বুট ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এগুলিতে পটাসিয়ামও থাকে, যা হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
4. ওজন কমাতে সাহায্য করে:
ছোলা বুট ফাইবার সমৃদ্ধ, যা আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ বোধ করতে সাহায্য করতে পারে। এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, ক্যালোরি গ্রহণ কমাতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
5. ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে:
- ছোলায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে।
- এটি বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
6. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
ছোলা বুট প্রোটিনের একটি ভাল উত্স, যা একটি স্বাস্থ্যকর প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয়। এগুলিতে ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজও রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এবং এটি শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
7. ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে:
- ছোলায় থাকা ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে।
- এটি ত্বককে উজ্জ্বল এবং চুলকে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
ছোলা বিভিন্নভাবে রান্না করা যায়। এটি তরকারি, ভুনা, ঝাল, ফালাফেল, হুমাস, বেগুনী, পিঁয়াজি, ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার করা যায়।
আরো পড়ুন ঃ
ছোলার ক্ষতিকর দিক
ছোলা একটি স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার হলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে।
১) হজমে সমস্যা:
- অতিরিক্ত ছোলা খাওয়া হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- ছোলার ফাইবার হজমে সময় নেয়, যার ফলে পেট ফাঁপা, গ্যাস, এবং অম্বল হতে পারে।
- যারা হজম সমস্যায় ভুগছেন তাদের সাবধানে ছোলা খাওয়া উচিত।
২) অ্যালার্জি:
- কিছু লোকের ছোলার প্রতি অ্যালার্জি থাকে।
- ছোলা খাওয়ার পর ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, এবং বমি বমি ভাব হতে পারে।
- অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
৩) অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্ট:
- ছোলায় ফাইটেট এবং ট্যানিন নামক অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্ট থাকে।
- অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্ট শরীরে খনিজ পদার্থ শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
- দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত ছোলা খাওয়া পুষ্টির ঘাটতির কারণ হতে পারে।
৪) গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য:
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের ছোলা খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
- ছোলার ফাইবার গর্ভবতী মায়েদের জন্য অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
৫) লবণ:
- বাজারে পাওয়া কিছু কৌটাজাত ছোলায় প্রচুর লবণ থাকে।
- অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
- লবণ কম ছোলা কিনতে চেষ্টা করুন।
সতর্কতা:
- ছোলা রান্নার আগে ভালো করে ধুয়ে লবণ দিয়ে ভিজিয়ে রাখলে হজমে সহায়তা করে।
- অতিরিক্ত ছোলা খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
- ছোলা খাওয়ার পর অস্বস্তি বোধ করলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
ছোলা খাওয়ার নিয়ম
ছোলা খাওয়ার অনেক উপায় আছে, আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো উপায়ে খেতে পারেন।
কিছু জনপ্রিয় উপায়:
১. সকালের নাস্তা:
- রাতে ভিজিয়ে রাখা ছোলা খোসা ছাড়িয়ে কাঁচা আদার সাথে খেতে পারেন।
- ছোলা দিয়ে স্মুদি বানাতে পারেন।
- ওটমিল বা দই-এর সাথে ছোলা মিশিয়ে খেতে পারেন।
২. দুপুরের খাবার:
- ছোলার তরকারি রান্না করে ভাতের সাথে খেতে পারেন।
- ছোলা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের পোলাও তৈরি করতে পারেন।
- ছোলার ডাল দিয়ে স্যুপ বানাতে পারেন।
৩. বিকেলের নাস্তা:
- ছোলা ভেজে খেতে পারেন।
- ছোলার মুড়ি খেতে পারেন।
- ছোলা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের স্যালাড তৈরি করতে পারেন।
৪. রাতের খাবার:
- ছোলার তরকারি রুটির সাথে খেতে পারেন।
- ছোলা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের কাবাব তৈরি করতে পারেন।
- ছোলার ডাল দিয়ে ভর্তা বানাতে পারেন।
পাঠকের মন্তব্য: