ছারপোকা একটি ক্ষতিকর পোকা যা মানুষের রক্ত চুষে খায়। এরা মূলত রাতে সক্রিয় থাকে এবং বিছানা, বালিশ, মশারি, সোফা ইত্যাদি জায়গায় বাস করে। ছারপোকা কামড়ানোর ফলে চুলকানি, ফোলাভাব, লালচে দাগ ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ছারপোকা বাড়িতে প্রবেশ করলে তা বের করা খুবই কঠিন। এরা খুবই ছোট এবং দ্রুত ছোপতে পারে। তাই ছারপোকা দমনে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ছারপোকা ও তেলাপোকা দূর করা খুবই কঠিন। তবে কিছু দ্রুত এবং কার্যকর উপায় রয়েছে যা দিয়ে আপনি মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে এসব পোকা দূর করতে পারেন।
Table of Contents
ছারপোকা কি
ছারপোকা হল এক ধরনের ক্ষতিকর পোকা যা মানুষের রক্ত চুষে খায়। এরা সাধারণত ঘরের বিছানা, সোফা, চেয়ার, কার্পেট ইত্যাদিতে বাস করে। ছারপোকা কামড়ানোর ফলে চুলকানি, লালচে দাগ, ফোঁড়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
ছারপোকা হল এক ধরনের ছোট, চ্যাপ্টা পোকা যা মানুষের রক্ত চুষে খায়। ছারপোকা সাধারণত ৫-৭ মিলিমিটার লম্বা হয়। ছারপোকা বাদামী বা লালচে বর্ণের হয়। ছারপোকা রাতে মানুষের ঘুমের সময় কামড়ায়। ছারপোকা কামড়ানোর ফলে চুলকানি, লালচে দাগ, ফোঁড়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
ছারপোকা সাধারণত মানুষের পোশাক, ব্যাগ, লাগেজ ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়ায়। ছারপোকা খুবই ছোট এবং দ্রুত চলাচল করতে পারে। তাই, এরা খুব সহজেই একটি স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ছারপোকার বৈশিষ্ট্য
- ছারপোকা দেখতে ছোট, বাদামী রঙের হয়।
- ছারপোকা রাতে সক্রিয় থাকে।
- ছারপোকা মানুষের রক্ত চুষে খায়।
- ছারপোকা বিছানা, বালিশ, মশারি, সোফা ইত্যাদি জায়গায় বাস করে।
ছারপোকা কতদিন না খেয়ে বাঁচতে পারে?
ছারপোকা না খেয়ে ৭০ দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে। ছারপোকার ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ ছারপোকা হওয়ার জন্য প্রায় ৪ সপ্তাহ সময় লাগে। এই সময়টায় ছারপোকাকে একবারও খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। ছারপোকা না খেয়ে এতদিন বাঁচতে পারে কারণ এরা তাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে চর্বি জমা রাখে। এই চর্বি থেকে তারা দীর্ঘদিন খাবার ছাড়া বাঁচতে পারে।
ছারপোকা দমনে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ছারপোকা খুবই ছোট এবং দ্রুত ছোপতে পারে। তাই ছারপোকা দমনের জন্য ঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, মশারি ইত্যাদি নিয়মিত গরম পানিতে ধুয়ে ফেলা, ঘরের আসবাবপত্র, বিছানা ইত্যাদির ফাঁক-ফোকর বন্ধ রাখা এবং ছারপোকা যে জায়গায় বাস করতে পারে এমন জায়গাগুলোতে কীটনাশক ছিটানো যেতে পারে।
ছারপোকা কীভাবে ছড়ায়?
ছারপোকা সাধারণত মানুষের পোশাক, ব্যাগ, লাগেজ ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়ায়। ছারপোকা খুবই ছোট এবং দ্রুত চলাচল করতে পারে। তাই, এরা খুব সহজেই একটি স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ছারপোকা ছড়ানোর আরও কিছু উপায় হল:
- ছারপোকা আক্রান্ত ঘর থেকে আসবাবপত্র, কাপড়, বিছানার চাদর, বালিশের কভার ইত্যাদি সরানোর মাধ্যমে।
- ছারপোকা আক্রান্ত ঘরের সাথে সংযুক্ত থাকা অন্যান্য ঘরের মাধ্যমে।
- ছারপোকা আক্রান্ত হোটেল, হাসপাতাল, ট্রেন, বাস ইত্যাদির মাধ্যমে।
ছারপোকা দূর করার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে পারেন:
- ছারপোকা সাধারণত বিছানা, সোফা, চেয়ার, কার্পেট ইত্যাদিতে বাস করে। তাই, এই জায়গাগুলি নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
- ছারপোকা গরম পানিতে মারা যায়। তাই, ঘরের বিছানার চাদর, বালিশের কভার, তোয়ালে ইত্যাদি নিয়মিত গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
- ছারপোকা কামড়ানোর ফলে চুলকানি হতে পারে। তাই, ছারপোকা কামড়ানোর পরে আক্রান্ত স্থানটি ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ছারপোকা দূর করতে পেশাদার কীটনাশক প্রয়োগকারীদের সাহায্য নিতে পারেন।
ছারপোকা কামড়ালে কি হয়?
ছারপোকা কামড়ালে সাধারণত নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দিতে পারে:
- চুলকানি: ছারপোকা কামড়ালে চুলকানি হয়। চুলকানি এতটাই তীব্র হতে পারে যে রাতে ঘুমাতেও সমস্যা হয়।
- ফোলাভাব: ছারপোকা কামড়ালে আক্রান্ত স্থানে ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।
- লালচে দাগ: ছারপোকা কামড়ালে আক্রান্ত স্থানে লালচে দাগ দেখা দিতে পারে।
- ক্ষত: কিছু ক্ষেত্রে ছারপোকা কামড়ালে ক্ষত হতে পারে।
ছারপোকা কামড়ালে আক্রান্ত স্থানে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা উচিত। এতে চুলকানি কমতে সাহায্য করে। আক্রান্ত স্থানে অ্যান্টিহিস্টামিন ক্রিম বা ওষুধ লাগালেও চুলকানি কমে যায়।
ছারপোকা কামড়ালে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
- কামড়ানোর স্থানে ব্যথা, ফুলে ওঠা, বমি ভাব, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিলে।
- ছারপোকা কামড়ের ফলে ত্বকের সংক্রমণ হলে।
- ছারপোকা কামড়ের ফলে অ্যালার্জি হলে।
ছারপোকা তাড়ানোর উপায় কি
ছারপোকা তাড়ানোর জন্য নিম্নলিখিত উপায়গুলি অনুসরণ করতে পারেন:
১. নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:
ছারপোকা দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল ঘরকে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। ঘরের বিছানা, সোফা, চেয়ার, কার্পেট ইত্যাদি সপ্তাহে অন্তত একবার ভালো করে ঝেড়ে পরিষ্কার করুন। ঘরের মেঝে, দেয়াল, আসবাবপত্র ইত্যাদিতে সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করুন।
২. গরম পানিতে কাপড় ধোয়া:
ছারপোকা গরম পানিতে মারা যায়। তাই, ঘরের বিছানার চাদর, বালিশের কভার, তোয়ালে ইত্যাদি নিয়মিত গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
৩. কীটনাশক ব্যবহার:
ছারপোকা তাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক পাওয়া যায়। তবে, কীটনাশক ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন। কীটনাশক ব্যবহারের আগে ঘরের সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দিন। কীটনাশক ব্যবহারের পরে ঘর থেকে বেরিয়ে যান এবং ২-৩ ঘণ্টা পরে ঘরে প্রবেশ করুন।
৪. ঘরোয়া উপায়:
ছারপোকা তাড়ানোর জন্য ঘরোয়া কিছু উপায়ও ব্যবহার করতে পারেন। যেমন:
- সাইট্রাস ফলের খোসা: লেবু, কমলা, বাতাবি লেবু ইত্যাদি ফলের খোসা ছারপোকা তাড়াতে কার্যকর। ফলের খোসাগুলিকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় রেখে দিন।
- রসুন: রসুন ছারপোকা তাড়াতে জন্য একটি প্রাকৃতিক উপায়। রসুন থেঁতো করে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিন।
- ভিনেগার: ভিনেগার ছারপোকা তাড়াতেও কার্যকর। একটি স্প্রে বোতলে ভিনেগার ভরে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় স্প্রে করুন।
- দারুচিনি: দারুচিনির গন্ধ ছারপোকা সহ বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় তাড়াতে সাহায্য করে। দারুচিনি গুঁড়া করে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিন।
ছারপোকা তাড়ানোর জন্য উপরের উপায়গুলি অনুসরণ করলে ছারপোকা দূর করতে সাহায্য করবে। তবে, ছারপোকা খুবই দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। তাই, ছারপোকা দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
এছাড়াও, ছারপোকা তাড়াতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে পারেন:
- ছারপোকা সাধারণত বিছানা, সোফা, চেয়ার, কার্পেট ইত্যাদিতে বাস করে। তাই, এই জায়গাগুলি নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
- ছারপোকা গরম পানিতে মারা যায়। তাই, ঘরের বিছানার চাদর, বালিশের কভার, তোয়ালে ইত্যাদি নিয়মিত গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
- ছারপোকা কামড়ানোর ফলে চুলকানি হতে পারে। তাই, ছারপোকা কামড়ানোর পরে আক্রান্ত স্থানটি ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ছারপোকা দূর করতে পেশাদার কীটনাশক প্রয়োগকারীদের সাহায্য নিতে পারেন।
ছারপোকা মারার ঔষধের নাম
ছারপোকা মারার জন্য অনেক ধরনের ঔষধ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু জনপ্রিয় ঔষধ হলো:
- ডাইক্লোরোভাস (dichlorovinyl dimethyl phosphate): এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর কীটনাশক যা ছারপোকা, তেলাপোকা, মশা ইত্যাদি পোকা দমনে ব্যবহার করা হয়।
- ফোসফেট (phosphate): এটিও একটি কার্যকর কীটনাশক যা ছারপোকা দমনে ব্যবহার করা হয়।
- ইনডক্সাকার্ব (indoxcarb): এটি ছারপোকা এবং অন্য কিছু পোকা দমনে ব্যবহৃত হয়।
- অ্যাডমাইট (adamite): এটি ছারপোকা, তেলাপোকা, মশা ইত্যাদি পোকা দমনে ব্যবহৃত হয়।
- সাইপারমেথ্রিন (cypermethrin): এটি একটি দ্রুত কার্যকর কীটনাশক যা ছারপোকা দমনে ব্যবহৃত হয়।
ছারপোকা দমনের জন্য ঔষধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ঔষধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই নির্দেশাবলী ভালোভাবে পড়ে নিন। ঔষধ ব্যবহারের সময় ও পরে হাত ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। ঔষধ ব্যবহারের পরে ঘরটি ভালোভাবে বাতাস দিন।
ছারপোকা দমনের জন্য ঔষধ ছাড়াও কিছু প্রাকৃতিক উপায়ও রয়েছে। এর মধ্যে কিছু জনপ্রিয় প্রাকৃতিক উপায় হলো:
- ন্যাপথলিন গুঁড়ো: ন্যাপথলিন গুঁড়ো ছারপোকা তাড়াতে সাহায্য করে। বিছানার চাদর, বালিশের কভার, মশারি ইত্যাদির চারপাশে ন্যাপথলিন গুঁড়ো ছিটিয়ে দিন।
- লেবুর রস: লেবুর রস ছারপোকা তাড়াতে সাহায্য করে। বিছানার চাদর, বালিশের কভার, মশারি ইত্যাদিতে লেবুর রস ছিটিয়ে দিন।
- পেঁয়াজের গন্ধ: পেঁয়াজের গন্ধ ছারপোকা পছন্দ করে না। পেঁয়াজ কুচি করে বিছানার চারপাশে রাখুন।
ছারপোকা দমনের জন্য প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরুন। প্রাকৃতিক উপায়ে ছারপোকা দমনে সময় লাগে।
পাঠকের মন্তব্য: