সর্দি হল একটি সাধারণ ভাইরাস সংক্রমণ যা ঠান্ডা লাগা, ঠাণ্ডা-কাশি, বা সর্দি-জ্বর নামেও পরিচিত। এটি মানবদেহের ঊর্ধ্ব শ্বাসপথ, বিশেষ করে নাকে আক্রমণ করে। এছাড়া এই রোগে গলবিল, অস্থিগহ্বর ও স্বরযন্ত্রও আক্রান্ত হতে পারে।
Table of Contents
কেন সর্দি হয়?
সর্দি হল একটি ভাইরাস সংক্রমণ। এটি সাধারণত রিনোভাইরাস, অ্যাডেনোভাইরাস, এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারণে হয়। এই ভাইরাসগুলি ঊর্ধ্ব শ্বাসপথের শ্লেষ্মা ঝিল্লি আক্রমণ করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে।
সর্দি ছড়াতে পারে:
- আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে, যেমন হাঁচি বা কাশি থেকে বের হওয়া তরল ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে
- আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র স্পর্শ করার মাধ্যমে
সর্দি সাধারণত 7-10 দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে উপসর্গগুলি 2 সপ্তাহেরও বেশি স্থায়ী হতে পারে।
সর্দির জন্য কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে, উপসর্গগুলি প্রশমিত করতে কিছু ওষুধ বা ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করা যেতে পারে।
সর্দির লক্ষণ ও উপসর্গ
সর্দির লক্ষণ ও উপসর্গগুলি হল:
- নাক দিয়ে পানি পড়া – সর্দির সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। এটি সাধারণত স্বচ্ছ এবং পাতলা হয়, তবে এটি ঘন এবং রঙিনও হতে পারে।
- হাঁচি – নাক দিয়ে পানি পড়া থেকে মুক্তি পেতে হাঁচি হয়। হাঁচি সাধারণত দ্রুত এবং শক্তিশালী হয়।
- গলাব্যথা – সর্দি ভাইরাসের সংক্রমণ গলায় প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এটি গলাব্যথা এবং কর্কশতা সৃষ্টি করতে পারে।
- মাথাব্যথা – সর্দি ভাইরাসের সংক্রমণ মাথায় প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এটি মাথাব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
- ক্লান্তি – সর্দি ভাইরাসের সংক্রমণ শরীরের শক্তি স্তর কমাতে পারে। এটি ক্লান্তি এবং দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে।
- কাশি – সর্দি ভাইরাসের সংক্রমণ শ্বাসযন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি কাশি সৃষ্টি করতে পারে।
- শরীর ব্যথা – সর্দি ভাইরাসের সংক্রমণ শরীরে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। এটি পিঠে, মাংসপেশীতে, বা হাড়ে ব্যথা হতে পারে।
- জ্বর – সর্দি ভাইরাসের সংক্রমণ শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। জ্বর সাধারণত হালকা থাকে, তবে এটি 104 ডিগ্রি ফারেনহাইট (40 ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত হতে পারে।
সর্দির উপসর্গগুলির তীব্রতা ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু লোকের ক্ষেত্রে, উপসর্গগুলি হালকা হতে পারে এবং তারা কাজ বা স্কুলে যেতে পারে। অন্যদের ক্ষেত্রে, উপসর্গগুলি গুরুতর হতে পারে এবং তারা বিছানায় থাকতে পারে।
সর্দির জন্য কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে, উপসর্গগুলি প্রশমিত করতে কিছু ওষুধ বা ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করা যেতে পারে।
ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে:
- নাকের ড্রপ বা স্প্রে – এগুলি নাক দিয়ে পানি পড়া কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- হাঁচির ওষুধ – এগুলি হাঁচি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- ব্যথানাশক – এগুলি মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, বা গলাব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- জ্বরনাশক – এগুলি জ্বর কমাতে সাহায্য করতে পারে।
সর্দি থেকে মুক্তির উপায়
সর্দি একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা সাধারণত নাক, গলা এবং শ্বাসনালীকে আক্রান্ত করে। সর্দির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে নাক দিয়ে জল পড়া, গলা ব্যথা, কাশি, মাথাব্যথা, এবং ক্লান্তি।
সর্দি থেকে মুক্তির জন্য নিম্নলিখিত ঘরোয়া উপায়গুলি কার্যকর হতে পারে:
- বিশ্রাম নিন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান। বিশ্রাম নেওয়া এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা সর্দি থেকে দ্রুত সেরে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়ক।
- শরীর উষ্ণ রাখুন। শরীর উষ্ণ রাখলে সর্দির লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য হয়। গরম কাপড় পরুন, গরম পানীয় পান করুন এবং ঘরে তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখুন।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। পানি পান করলে শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে যায় এবং তা সহজে বেরিয়ে যেতে পারে। তরল খাবারও পান করতে পারেন।
- গলা ব্যথা উপশমের জন্য লবণ মিশিয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করুন। এতে গলা ব্যথা এবং শ্লেষ্মা কমতে সাহায্য হয়। তবে ছোটো শিশুরা ঠিকমতো গড়গড়া করতে পারে না বলে তাদের ক্ষেত্রে এই পরামর্শ প্রযোজ্য নয়।
- কাশি উপশমের জন্য মধু খেতে পারেন। মধুতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা কাশি উপশম করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, সর্দি থেকে মুক্তির জন্য নিম্নলিখিত টিপসগুলি অনুসরণ করতে পারেন:
- অসুস্থ ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরে থাকুন।
- হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- মুখে হাত দেওয়া এড়িয়ে চলুন।
সর্দি সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে যদি সর্দির লক্ষণগুলি ১০ দিনের বেশি স্থায়ী হয় বা যদি আপনার অন্য কোনো গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে সর্দি থেকে মুক্তির উপায়
সর্দির লক্ষণগুলি উপশম করার জন্য এবং অসুস্থতা থেকে দ্রুত সেরে ওঠার জন্য কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
সর্দি থেকে মুক্তির ঘরোয়া পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে:
- কাশি উপশমের জন্য মধু খান: মধু একটি প্রাকৃতিক কাশি নিরাময়কারী। এক চা চামচ মধু গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন বা সরাসরি খেতে পারেন।
- হলুদ চা পান করুন: হলুদে অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সর্দির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এক গ্লাস গরম দুধে আধা চা চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন।
- আদা চা পান করুন: আদাতে অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সর্দির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এক গ্লাস গরম পানিতে এক টুকরো আদা কুচি করে দিয়ে ফুটিয়ে নিন। পানি ফুটে অর্ধেক হয়ে এলে নামিয়ে ছেঁকে নিন। আদা চা পান করুন।
- লেবুর রস পান করুন: লেবুর রসে ভিটামিন সি রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এক গ্লাস গরম পানিতে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
- রসুন খেতে পারেন: রসুন একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যা সর্দির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কয়েকটি কোয়া রসুন চিবিয়ে খেতে পারেন বা রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ এলার্জি দূর করার উপায়
সর্দিজ্বর থেকে বাঁচবেন যেভাবে
সর্দিজ্বর হল একটি সাধারণ ভাইরাস সংক্রমণ যা ঠান্ডা লাগা, ঠাণ্ডা-কাশি, বা সর্দি-জ্বর নামেও পরিচিত। এটি মানবদেহের ঊর্ধ্ব শ্বাসপথ, বিশেষ করে নাকে আক্রমণ করে। এছাড়া এই রোগে গলবিল, অস্থিগহ্বর ও স্বরযন্ত্রও আক্রান্ত হতে পারে।
সর্দিজ্বর থেকে বাঁচার জন্য নিম্নলিখিত নিয়মগুলি মেনে চলা যেতে পারে:
- হাত নিয়মিত ধুয়ে পরিষ্কার রাখা
হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখা হল সর্দিজ্বর থেকে বাঁচার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম। কারণ, সর্দিজ্বরের ভাইরাসগুলি হাঁচি বা কাশি থেকে নির্গত তরল বা বাষ্পের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই তরল বা বাষ্প হাতের মাধ্যমে অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই, নিয়মিত সাবান এবং পানি দিয়ে হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখলে সর্দিজ্বরের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমানো যায়।
- আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকা
আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকাও সর্দিজ্বর থেকে বাঁচার একটি কার্যকর উপায়। কারণ, আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি বা কাশি করার সময় ভাইরাসগুলি তার চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। তাই, আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকলে এই ভাইরাসগুলি সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে।
- অসুস্থ ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র স্পর্শ না করা
অসুস্থ ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র স্পর্শ না করাও সর্দিজ্বর থেকে বাঁচার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র স্পর্শ না করলে এই ভাইরাসগুলি সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুমানো
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুমানোও সর্দিজ্বর থেকে বাঁচার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী থাকলে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে।
- ভিটামিন সি এবং জিংক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
ভিটামিন সি এবং জিংক হল দুটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই, সর্দিজ্বর থেকে বাঁচতে ভিটামিন সি এবং জিংক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে লেবু, কমলা, আম, ব্রোকলি, এবং মটরশুঁটি। জিংক সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে মাছ, কাঁচা বাদাম, এবং বীজ।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা
নিয়মিত ব্যায়াম করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই, সর্দিজ্বর থেকে বাঁচতে নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।
- স্ট্রেস কমানো
স্ট্রেস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। তাই, সর্দিজ্বর থেকে বাঁচতে স্ট্রেস কমানো উচিত।
সর্দিজ্বর হলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত:
- যদি উপসর্গগুলি গুরুতর হয় বা 2 সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- সর্দি হলে আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যদের সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাই, আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঘরে থেকে বিশ্রাম নেওয়া উচিত এবং অন্যদের কাছ থেকে দূরে থাকা উচিত।
সর্দিজ্বর একটি সাধারণ রোগ হলেও এটি থেকে বাঁচার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। এই নিয়মগুলি মেনে চললে সর্দিজ্বরের ঝুঁকি কমানো যায় এবং যদি সর্দি হয়েও যায় তবে তা দ্রুত সেরে যায়।
পাঠকের মন্তব্য: