খুশকি হল একটি সাধারণ চর্মরোগ যা মাথার খুলির ত্বকে ঘটে। এটি মাথার খুলির ত্বকের মৃত কোষের অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে হয়। খুশকির ফলে মাথার খুলিতে চুলকানি, লালভাব এবং সাদা বা হলুদ ত্বকের টুকরো পড়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
Table of Contents
খুশকির কারণ
খুশকির প্রধান কারণ হলো মাথার ত্বকে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস নামক একটি প্রদাহজনক অবস্থা। এই প্রদাহের ফলে মাথার ত্বকের মৃত কোষের বৃদ্ধি এবং ঝরে পড়ার হার বেড়ে যায়। সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে এর জন্য নিম্নলিখিত কারণগুলি দায়ী বলে মনে করা হয়:
- জেনেটিক কারণ: খুশকির একটি বংশগত প্রবণতা রয়েছে।
- হরমোন: টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেশি থাকলে খুশকি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- ফাঙ্গাস: মাথার ত্বকে থাকা একটি ফাঙ্গাস, যার নাম ম্যালাসেজিয়া, খুশকির জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
- অন্যান্য কারণ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ঠান্ডা আবহাওয়া, রুক্ষ চুল, এবং কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও খুশকির কারণ হতে পারে।
খুশকি প্রতিরোধ বা এর লক্ষণগুলি কমাতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:
- নিয়মিত চুল পরিষ্কার করা।
- খুশকি-রোধী শ্যাম্পু ব্যবহার করা।
- মাথার ত্বককে আর্দ্র রাখা।
- ধুলাবালি ও ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে রক্ষা করা।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ কমানো।
মেয়েদের চুলে খুশকি বেশি হয় কেন?
মেয়েদের চুলে খুশকি বেশি হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- জেনেটিক কারণ: খুশকির একটি বংশগত প্রবণতা রয়েছে। যদি কারও পরিবারে কারও খুশকির সমস্যা থাকে, তাহলে তারও খুশকি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
- হরমোন: টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেশি থাকলে খুশকি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। টেস্টোস্টেরন হরমোন পুরুষদের মধ্যে বেশি থাকে, তবে নারীদেরও টেস্টোস্টেরন হরমোন থাকে। তাই মেয়েদের মধ্যেও খুশকির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ফাঙ্গাস: মাথার ত্বকে থাকা একটি ফাঙ্গাস, যার নাম ম্যালাসেজিয়া, খুশকির জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। মেয়েদের মধ্যে ম্যালাসেজিয়া ফাঙ্গাস বেশি বাড়তে পারে, যার ফলে খুশকির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অন্যান্য কারণ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ঠান্ডা আবহাওয়া, রুক্ষ চুল, এবং কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও খুশকির কারণ হতে পারে।
এছাড়াও, মেয়েরা সাধারণত ছেলেদের তুলনায় বেশি চুলের যত্ন নেয়। তারা বেশি শ্যাম্পু ব্যবহার করে, যা মাথার ত্বককে শুষ্ক করে তুলতে পারে। শুষ্ক ত্বক খুশকির একটি প্রধান কারণ।
খুশকির লক্ষণ
খুশকি হল মাথার ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা। এটি মাথার ত্বকের মৃত কোষের দ্রুত ঝরে পড়ার কারণে হয়। খুশকির লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- মাথার ত্বকে শুষ্কতা
- মাথার ত্বক থেকে সাদা বা হলুদ বর্ণের ঝরে পড়া
- মাথার ত্বকে চুলকানি
- মাথার ত্বকে লালভাব
খুশকির লক্ষণগুলি সাধারণত মাথার ত্বকের উপরের অংশে বেশি দেখা যায়। তবে, মাথার ত্বকের অন্যান্য অংশে, যেমন কান, ঘাড়, কাঁধ, বা বুকেও খুশকি হতে পারে।
খুশকির লক্ষণগুলির তীব্রতা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, খুশকির লক্ষণগুলি কেবলমাত্র সামান্য অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। অন্য ক্ষেত্রে, খুশকির লক্ষণগুলি গুরুতর হতে পারে এবং চুল পড়া, মাথার ত্বকের ব্যথা, বা মাথার ত্বকের ক্ষত হতে পারে।
চিরতরে খুশকি দূর করার উপায়
খুশকি একটি সাধারণ সমস্যা যা প্রায়শই শুষ্ক মাথার ত্বকের কারণে হয়। এটি মাথার ত্বকের মৃত কোষের অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণেও হতে পারে। খুশকির ফলে মাথার ত্বকে চুলকানি, লালভাব এবং সাদা বা হলুদ ত্বকের টুকরো পড়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
খুশকি দূর করার জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- নিয়মিত শ্যাম্পু করা: খুশকি দূর করতে নিয়মিত শ্যাম্পু করা গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তাহে দুবার বা তিনবার শ্যাম্পু করা উচিত। শ্যাম্পু করার সময় মাথার ত্বকে আলতোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে।
- খুশকি প্রতিরোধক শ্যাম্পু ব্যবহার করা: খুশকি প্রতিরোধক শ্যাম্পুতে খুশকি দূর করতে সাহায্যকারী বিভিন্ন উপাদান থাকে। যেমন, সালফিউরিক অ্যাসিড, সেলিনিয়াম সালফাইড, সালিসাইলিক অ্যাসিড, কেটোকোনাজল বা জিংক পিরিথিয়ন।
- প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা: খুশকি দূর করতে কিছু প্রাকৃতিক উপাদানও কার্যকর। যেমন, লেবুর রস, নারকেল তেল, অ্যালোভেরা জেল, টক দই ইত্যাদি।
- খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা: কিছু খাবার খুশকির ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন, ফাস্ট ফুড, ভাজা খাবার, চিনিযুক্ত পানীয় ইত্যাদি। এই খাবারগুলি এড়িয়ে চললে খুশকির ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ লেবু দিয়ে চুল সিল্কি করার উপায়
খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়
লেবুর রস: লেবুর রসে অ্যাসিডিক প্রভাব রয়েছে যা মৃত ত্বকের কোষগুলিকে দ্রবীভূত করতে সাহায্য করে। লেবুর রস ব্যবহার করতে, দুই টেবিল চামচ লেবুর রসের সঙ্গে এক কাপ পানি মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে লাগান এবং ১০-১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নিন।
নারকেল তেল: নারকেল তেল মাথার ত্বককে আর্দ্র করতে এবং মৃত ত্বকের কোষগুলিকে ঝরে পড়তে সাহায্য করে। নারকেল তেল ব্যবহার করতে, গরম নারকেল তেল মাথার ত্বকে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নিন।
অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরা জেল মাথার ত্বককে শীতল রাখতে এবং মৃত ত্বকের কোষগুলিকে ঝরে পড়তে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে, অ্যালোভেরা জেল মাথার ত্বকে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নিন।
টক দই: টক দইয়ে প্রোবায়োটিক থাকে যা মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। টক দই ব্যবহার করতে, টক দই মাথার ত্বকে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নিন।
এই ঘরোয়া উপায়গুলি খুশকি দূর করতে সাহায্য করতে পারে। তবে, যদি খুশকির সমস্যা বেশি হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
খুশকি দূর করার শ্যাম্পু
খুশকি দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের শ্যাম্পু বাজারে পাওয়া যায়। এই শ্যাম্পুগুলিতে বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকে যা খুশকির কারণগুলি কমাতে সাহায্য করে। খুশকি দূর করার শ্যাম্পুগুলির মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত উপাদানগুলি থাকে:
- কেটোকোনাজোল: এটি একটি অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যা মাথার ত্বকে থাকা ম্যালাসেজিয়া ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে।
- সালফিউরিক অ্যাসিড: এটি একটি শুষ্কতার এজেন্ট যা মাথার ত্বকের মৃত কোষগুলিকে দ্রবীভূত করতে সাহায্য করে।
- জিঙ্ক প্যারিথিয়ন: এটি একটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যা মাথার ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- সেলেন সালফাইড: এটি একটি অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যা মাথার ত্বকে থাকা ম্যালাসেজিয়া ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে।
খুশকি দূর করার শ্যাম্পুগুলি সাধারণত সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করা হয়। শ্যাম্পু করার সময় মাথার ত্বক ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। শ্যাম্পু করার পর চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
খুশকি দূর করার শ্যাম্পু ব্যবহারের পাশাপাশি নিম্নলিখিত বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে:
- নিয়মিত চুল পরিষ্কার করা। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার চুল পরিষ্কার করতে হবে।
- চুল বেশি গরম পানিতে না ধুয়ে ফেলা। গরম পানি মাথার ত্বককে শুষ্ক করে তুলতে পারে।
- চুলের আগা নিয়মিত কেটে ফেলা। আগা ফাটা চুলে খুশকি বেশি হয়।
- মাথায় টুপি বা স্কার্ফ পরা। বাইরে বেরোনোর সময় মাথায় টুপি বা স্কার্ফ পরা ভালো।
যদি খুশকির সমস্যা তীব্র হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পাঠকের মন্তব্য: