পরিস্থিতির অবনতিতে বাড়ছে উদ্বেগ, সারাদেশে কারফিউ জারির পরামর্শ।

করো’নার নতুন ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট বর্তমানে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতে প্রথম শনাক্ত এই ভ্যারিয়েন্ট অতিসংক্রমণশীল। এ কারণে প্রতিদিন মৃ’ত্যু ও আ’ক্রা’ন্তের নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। গত ৪ জুলাই একদিনে ১৫৩ জন প্রাণ হারান। ওই দিন শনাক্ত হয়েছিলো ৮ হাজার ৬৬১ জন। পর দিন ৫ জুলাই মা’রা যান ১৬৪ জন এবং আ’ক্রা’ন্ত ৯ হাজার ৯৬৪ জন। গত ৬ জুলাই আ’ক্রা’ন্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৫২৫ জন। গতকাল বুধবার মৃ’ত্যু হয়েছে ২০১ জনের, যা সর্বোচ্চ রেকর্ড। পরিস্থিতির আরো অবনতি ‘হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে, করো’নার বর্তমান পরিস্থিতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় উদ্বেগ বাড়ছে। দ্রুতগতিতে বেড়ে চলা এই পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে বিচলিত স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বলা হচ্ছে, সারাদেশের হাসপাতালগু’লোতে করো’না আ’ক্রা’ন্ত রোগীর চাপ এবং মৃ’ত্যু বাড়তে থাকার স’ঙ্গে স’ঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে উদ্বেগও বাড়ছে। প্রতিনিয়ত রোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতালে বেড ও অক্সিজেনের চাহিদাও বাড়ছে। এ রকম অস্বাভাবিক হারে রোগী বাড়তে থাকলে চিকিৎসাসেবা ও অক্সিজেন সরবরাহ চ্যালেঞ্জ ‘হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে করো’নার লাগাম টানতে প্রয়োজনে কারফিউ জারির পরামর’্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

অতি সংক্রমণশীল এই ভ্যারিয়েন্টটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, বর্তমানে সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়ছে। গত ৩ জুলাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেইয়েসাস বলেছেন, কমপক্ষে ৯৮টি দেশে ভারতে প্রথম শনাক্ত করো’না ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। ভ্যারিয়েন্টটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটির কাঠামোগত এবং চারিত্রিক রূপান্তর ঘটে চলেছে।

এদিকে করো’না পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ১ জুলাই থেকে ৭ দিন ধরে মানুষের চলাফেরায় বিধিনিষে’ধ জারি থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। যদিও এই বিধিনিষে’ধের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে আরো সময় প্রয়োজন। এ কারণে সরকার চলমান বিধিনিষে’ধ ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই স’প্তাহের পরিপূর্ণ লকডাউন দিয়ে মানুষকে ঘরে রাখতে প্রয়োজনে কারফিউ জারি করার পরামর’্শ দিয়েছেন। তিনি দৈনিক কমপক্ষে এক লাখ মানুষের করো’না পরীক্ষা করা, একজন আ’ক্রা’ন্ত হলে পুরো পরিবারকে আইসোলেশনে রাখারও পরামর’্শ দেন। অন্যথায় পরিস্থিতি আরো ভ’য়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করেছেন।

এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদ’ণ্ড অনুযায়ী, রোগী শনাক্তের হার থেকে বোঝা যায় কোনো দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না। সংস্থাটির হিসেবে কোনো দেশে টানা দুই স’প্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্ত ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধ’রা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে রোগী শনাক্তের হার এরই মধ্যে ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, সে অনুযায়ী জুলাই মাসের সংক্রমণ গত জুন এবং এপ্রিল মাসকে ছাড়িয়ে যাব’ে। আর রোগীর সংখ্যা দিন দিন এভাবে বাড়লে সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ‘হতে হবে। এমনকি অক্সিজেন সরবরাহেও চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, এখন যে আংশিক লকডাউন হচ্ছে এর সুফল হয়তো মিলতে পারে কমপক্ষে আরো এক স’প্তাহ পর। কিন্তু এর আগে যদি মানুষকে ঘরব’ন্দি করা না যায়, কোথায় কে আ’ক্রা’ন্ত সেটা চিহ্নিত করা না যায়, তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। এখনই হাসপাতালগু’লোতে জায়গা হচ্ছে না। সামনে আরো খারাপ ‘হতে পারে।

পাঠকের মন্তব্য:

Check Also

নিঃস্ব পরিবার গুলোকে ঈদের বাজার দিতে চাই: তাসরিফ

সংগীতশিল্পী হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ জনপ্রিয় তাসরিফ। তবে গানের পাশাপাশি তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান ২০২২ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *