বিয়ে-বাচ্চা সবই অস্বীকার, অসহায় তরুণী

চাকুরিজীবি মেয়েটির সঙ্গে কারনে অকারনে দেখা করেছেন, কর্মস্থলে গিয়ে কথাও বলতেন। এক সময় মেয়েটিকে খারাপ প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ সবই করেছেন রাজু বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি। তাতেও সম্মতি না পেয়ে অবশেষে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে বিয়ে কথা বলে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে মেয়েটি ৩ মাসের অন্তসত্বা হলে সবকিছুই অস্বীকার করেন রাজু।

রুমি খাতুন নামের সেই মেয়েটির কোলে এখন দুই মাসের শিশু সন্তান, সেও অসুস্থ। পিতাহারা মেয়েটি এখন কোলের শিশু নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আদালতে মামলা করায় প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাকে। মামলা তুলে না নিলে এলাকা ছাড়া করার ঘোষনা দিয়েছেন রাজু। মেয়েটি অসুস্থ বাচ্চাকে হাসপাতালের বেডে রেখে যাকে পাচ্ছেন তারই পাঁয়ে ধরে শুধু বিচার দাবি করছেন। বাঁচার জন্য কিছু একটা করার অনুরোধ জানাচ্ছেন। অন্যথায় শিশুসহ মৃত্যু ছাড়া কোনো উপায় তার নেই বলে চিৎকার করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন।

রুমি খাতুন (২৪) মেহেরপুর জেলার ইসলামনগর গ্রামের রুহুল আমিনের কন্যা। তার নানা বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রাকড়া গ্রামে। রুমি জানান, তার বয়স যখন ২ বছর তখন তার বাবার সঙ্গে মা আনোয়ারা বেগমের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। সেই থেকে তারা মা-মেয়ে নানা বাড়িতে থাকেন। রুমি যখন ৭ম শ্রেণীতে পড়ালেখা করে তখন নানা-মামারা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যশোর জেলার খাজুরা এলাকার রাসেল হোসেন নামের এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেন। তাকে সংসারের বোঝা মনে করে বিয়ে দিয়ে অন্যের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। সেই সংসারে রাফিন হোসেন নামের একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেওয়ার পর স্বামী তাকে তাড়িয়ে দেন। মাত্র ২ বছর সেখানে সংসার করেছন। এরপরফিরে আসেন নানা বাড়ি থাকা মায়ের কাছে। তার সেই ছেলেটির এখন বয়স ৫ বছর, থাকেন নানী আনোয়ারার সঙ্গেই।

রুমি খাতুন আরো জানান, স্বামী সংসার করতে না পেরে তিনি কালীগঞ্জ শহরের শাহজালাল ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারে চাকুরী নেন। এখানে কাজ করতেন আর বাচ্চাটা বড় করে তুলছিলেন। মায়ের সঙ্গে থেকে ভালোই চলছিল তার সংসার। এমন সময় কালীগঞ্জ শহরের ফয়লা এলাকার নুর ইসলামে পুত্র রাজু আহম্মদ তার পিছু নেয়। মাঝে মধ্যে তার কর্মস্থালে যেতেন, নানা ভাবে কথা বলার চেষ্টা করতেন। একটি সময় তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন এবং শারীরিক সম্পর্ক করার দাবি করেন।

তিনি এসবের কিছুতেই রাজি ছিলেন না। ২০১৯ সালের প্রথম থেকেই তাকে এভাবে জ্বালাতন করতে থাকেন। একটি সময় তার কর্মস্থলের মালিক তাকে সাবধান করেন। এতেও কোনো কাজ না হলে রুমি বিয়ের প্রস্তাব দেন। রাজু বিয়েতে রাজি হয়ে ওই বছরের ২ মে ফয়লা এলাকার একটি কাজি অফিসে নিয়ে একটি নিল রং এর কাগজে স্বাক্ষর করান। রাজু নিজেও সেই কাগজে স্বাক্ষর করেন। তারপর তারা শহরের ঢাকালে পাড়ায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। সেখানে তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করেন।

রুমি জানান, তার গর্ভে যখন তিন মাসের বাচ্চা তখন রাজুকে জানায়। এই জানানোর পর রাজু তাকে এড়িয়ে চলতে থাকে, এমনকি তাদের কোনো বিয়ে হয়নি বলে দাবি করেন। তার গর্ভের বাচ্চাকে অস্বিকার করে। এরপর তিনি কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ের কাবিন দাবি করলে তিনিও বলেন বিয়েটা মুখে মুখে হয়েছে, তাদের কোনো কাবিন হয়নি। এই কথা বলার পর তিনি ২০২১ সালের ২০ মে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্তার সহযোগিতা নিয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি এখনও চলমান রয়েছে। রাজু ও তার লোকজন এখন মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, দুই মাসের শিশুটির নাম রেখেছেন রিহান। শিশুটি বর্তমানে অসুস্থ, তার প্রসাবের সমস্যা হচ্ছে। সারাক্ষণ কান্নাকাটি করছে। চিকিৎসকরা বলে দিয়েছেন অস্ত্রপচার করাতে হবে। কিন্তু কাছে কোনো টাকা নেই। যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তিনি আরো বলেন, গর্ভে বাচ্চা আসায় ৪ মাসের পর চাকুরিটি ছেড়ে দিয়েছেন। এতোদিন কষ্ট করে বাসায় ছিলেন। বাচ্চার জন্মের সময় সিজার করাতে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যা মানুষের কাছে হাত পেতে নিয়েছেন। এখন যে বাসায় ভাড়া থাকেন তারও দুই মাসের টাকা বাকি। তারা বাসা ছাড়তে বলছেন। অর্থের অভাবে ঠিকমতো খাওয়া হচ্ছে না, সেখানে বাচ্চাটি কিভাবে বাচাঁবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

রুমি খাতুনের মা আনোয়ারা বেগম জানান, এই বিয়ে তিনি দিতে চাননি। রাজু জোর করে বিয়ে করেছেন। বিয়ে সময় তিনি নিজের মেয়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন যেন বিয়েটা ভেঙ্গে যায়। তাও সে কারো কথা না শুনে বিয়ে করলো। এখন মেয়েটাকে রাস্তায় ভাষিয়ে দিল। তিনি এর বিচার দাবি করেন।

এ বিষয়ে রাজু আহম্মদ জানান, তিনি বিয়ে করেছেন সঠিক। ভাড়া বাসায় থাকতেন। মাঝে মধ্যে সমস্যা হয়েছে কিন্তু ছেড়ে দেননি। তাহলে কেন মামলা করলেন। এই মামলা করার কারনে তিনি সবকিছু অস্বীকার করছেন। তিনি বলেন, শশুর বাড়িতে উঠার জন্য রুমি মামলাটি করেছে। এখন মামলা তুলে না নিলে তিনি কিছুই করবেন না।

বিষয়টি নিয়ে দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জীবন কুমার জানান, রুমি খাতুনের মামলাটি তিনি তদন্ত করছেন। ধর্ষণ ও ধর্ষণের সহায়তা করার অভিযোগে তিনি মামলা করেছেন। তদন্ত চলছে বলে তিনি জানান।

পাঠকের মন্তব্য:

Check Also

মাদক মেশানো পানীয় খাইয়ে ১২ তরুণীকে ধ”র্ষ”ণ!

অস্ট্রেলিয়ায় মাদক মেশানো পানি খাইয়ে ১২ তরুণী ও নারীকে ধ”র্ষ”ণের খবর পাওয়া গেছে বালেশ ধনখড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *