




প্রায়ই মন্দির ঝাড়ু দেওয়ার কথা বলে ১৫ বছরের বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরী নিজ বাসায় ডেকে নিতেন প্রতিবেশী নারী। বিনিময়ে দিতেন কিছু খাবার। এভাবেই চলতে থাকে দীর্ঘদিন। হঠাৎ একদিন হাতে পায়জামা নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফেরেন কথা বলতে না পারা মেয়েটি। এরপর মায়ের সামনেই করেন বমি। ফলে জানতে বাকি রইল না মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা। খাবারের লোভ দেখিয়ে নিজ বাসায় নিয়ে বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরীকে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতেন প্রতিবেশী সেই নারী।
ঘটনাটি দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের। যদিও ৩ ডিসেম্বর সকালে নিজ বাড়িতে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ধ’র্ষ’ণে’র পর অন্তঃসত্ত্বা সেই বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরী। তবে এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।





ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা বলেন, গত শুক্রবার সকালে মেয়ের প্রসব বে’দ’না ওঠে। কথা বলতে না পারায় কান্নাকাটি করছিল। এরপর বুঝতে পেরে স্থানীয় এক ধাত্রীর মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করাই। তবে মেয়েটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেলের সহায়তায় দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে মা ও নবজাতক শিশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
পরিবার ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২১ মার্চ ধ’র্ষ’ণের শিকার হন প্রতিবন্ধী ওই কিশোরী। প্রায় সময় মন্দির ঝাড়ু দেওয়ার কথা বলে তাকে বাসায় ডেকে নিয়ে যেতেন প্রতিবেশী এক নারী। বিনিময়ে হাতে কিছু খাবার দিতেন। এ কারণে তিনি ডাকলেই চলে যেতেন প্রতিবন্ধী কিশোরী। একদিন ওই কিশোরী হাতে পায়জামা নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে আসেন।





পরিবারের লোকজন তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কিছু বলতে পারেননি। পরে মেয়ের মা ওই বাড়িতে গেলে সেখানে শয়নকক্ষে দিপু চন্দ্র রায় নামে একজনকে দেখতে পান। প্রতিবেশী নারীকে মেয়ের কান্নার কারণ জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। পাশাপাশি কারো কাছে অভিযোগ না করতে হুমকি দেন।
২১ আগস্ট রাতে ওই প্রতিবন্ধী কিশোরী বমি করতে থাকেন। এরপর শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে পরদিন ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেলের সহযোগিতায় দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তিনদিন চিকিৎসা চলে। চিকিৎসকের দেওয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মেয়েটির পরিবার জানতে পারে, ওই কিশোরী ২১ সপ্তাহের গর্ভবতী। পরবর্তীতে ৩ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নিজ বাড়িতে কন্যাসন্তান প্রসব করেন তিনি।





ঘটনার পরদিন দিপু চন্দ্র রায়সহ চারজনের বিরুদ্ধে চিরিরবন্দর থানায় ধ’র্ষ’ণের অভিযোগে মামলা করেন কিশোরীর বাবা। পুলিশ অভিযোগ আমলে নিয়ে ওই রাতেই দিপু চন্দ্র রায়কে নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
এদিকে, জন্ম নেয়া শিশুটিকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে ওই প্রতিবন্ধী কিশোরীর পরিবার। বিশেষ করে ধ’র্ষ’ণের শিকার হওয়া প্রতিবন্ধী কিশোরীর বাবা একজন দিনমজুর ও মা প্রতিবন্ধী হওয়ায় নবজাতকের লালন-পালন নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে শিশুটির তদারকি করছেন কিশোরীর চাচি। এ অবস্থায় প্রসব পরবর্তী জটিলতা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা করাও সম্ভব হচ্ছে না পরিবারটির পক্ষে। বাধ্য হয়ে ওসিসির সহযোগিতায় বুধবার জেলা প্রশাসকের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।





ওই কিশোরীর চাচা বলেন, একটা প্রতিবন্ধী মেয়ের সঙ্গে এমন একটি জঘন্য কাজ করবে বুঝতে পারিনি। এর সঠিক বিচার চাই আমরা। পাশাপাশি সরকারের কাছে অসহায় পরিবারটির জন্য কিছু একটা করার আবেদন জানাচ্ছি।
চিরিরবন্দর থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার বলেন, মেয়েটির বাবার করা ধ’র্ষ’ণ মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছেন।
পাঠকের মন্তব্য: