ব্রিজ অফ ডেথ : যেখানে এলেই আত্ম হ’ত্যা’র চেষ্টা করে কুকুররা

পাহাড়ি খাদের ওপর ঝুলে আছে একটি সেতু। সেতুর চারদিকেই চোখধাঁধাঁনো প্রকৃতি। সেখানে উঁকি দেয় বিকেলের সূর্য। সেখানেই সূর্যাস্ত দেখতেই এসেছিলেন অ্যালিস ট্রিভেরো নামের এক স্কটিশ ব্যক্তি। সঙ্গে ছিল তার পোষ্য কুকুর ‘ক্যাসি’। কিন্তু গাড়ির দরজা খোলার পরই ঘটে গেল এক বিপত্তি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড়ে গিয়ে ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিলো ক্যাসি। হ্যাঁ, আত্ম হ’ত্যা’র চেষ্টা।বছর কয়েক আগে স্কটল্যান্ডের ডাম্বারটন শহরের ওভারটাউন ব্রিজে ঘটেছিল এমন ঘটনা।

তবে ক্যাসি একা নয়, স্কটল্যান্ডের এই ব্রিজ থেকে রহস্যময় কোনো কারণে আত্ম হ’ত্যা’র চেষ্টা করে যে-কোনো কুকুর। শুধু শেষ ৫০ বছরের ইতিহাসে প্রায় ৩০০-এর বেশি এই ধরনের ঘটনা বা দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ওভারটাউন ব্রিজ। প্রাণ গেছে ৫০-এর বেশি প্রাণীর। আর সেই কারণে ব্রিজের প্রবেশপথে সরকারের তরফে বসেছে সতর্কবার্তা। ‘ডেঞ্জারেস ব্রিজ : প্লিস কিপ ইয়োর ডগ অন আ লিস”।

সেতুটি নির্মিত হয়েছিল ১৮৯৫ সালে। ওভারটাউন প্যালেসের সঙ্গে শহরের মূল রাস্তার সংযোগ করতেই সেতুটির নির্মাণ করেন ওভারটাউন দম্পতি। অবশ্য প্রাথমিকভাবে এই সেতুটি তেমন কোনো আকর্ষণের বিষয় ছিল না স্থানীয়দের কাছে।

১৯০৮ সালেই মারা গিয়েছিলেন মিস্টার ওভারটাউন। বিশ্বযুদ্ধের পর লেডি ওভারটাউন মারা যাওয়ার পর খ্যাতি বাড়তে থাকে ওভারটাউন ব্রিজের। ঘটতে থাকে একের পর এক পোষ্যের আত্ম হ’ত্যা’র ঘটনা। স্থানীয়রা মনে করেন, লেডি ওভারটাউনের অতৃপ্ত আত্মাই দায়ী এই ‘ভৌতিক’ কার্যকলাপের জন্য।

অন্যদিকে লেডি ওভারটনের মৃত্যুর পর প্রাসাদটি দীর্ঘদিন ব্যবহৃত বিশ্বযুদ্ধের হাসপাতাল এবং মাতৃসদন হিসেবে। দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে ওভারটন প্যালেসে। সেদিক থেকেও ভৌতিকতার যোগ খুঁজে পান স্থানীয়রা। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, এখনও ওভারটন হাউসে দেখা মেলে অশরীরীদের। আর তেনাদের দেখা পেয়েই সেতু থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে অবলা প্রাণীগুলো।

পঞ্চাশের দশকে এই অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের জন্য সেতুটির নাম দেওয়া হয় ‘ব্রিজ অফ ডেথ’। আবার চলতি কথায় ‘ডগ সুইসাইড ব্রিজ’ বলেও ডাকা হত সেতুটিকে।

১৯৯৪ সালে ঘটে যায় আরও অদ্ভুত একটি ঘটনা। স্ত্রীয়ের সঙ্গে ঘুরতে এসে ৫০ ফুট উঁচু ব্রিজ থেকে হঠাৎ করেই নিজের সদ্যজাত সন্তানকে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দেন কেভিন নামের এক ব্যক্তি। বলাবাহুল্য, প্রাণ বাঁচেনি শিশুটির। বছর কয়েকের মধ্যে আরও এক স্কটিশ খ্রিস্টান সন্ত দাবি করেন, অজানা কোনো কারণে তিনি ব্রিজের কিনারে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। অদৃশ্য কেউ তাঁকে ব্রিজ থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া চেষ্টা করছিল বলেও দাবি করেন তিনি।

কিন্তু আদৌ কি সত্যি এমন অলৌকিক ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে এই সেতুর সঙ্গে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই দল বেঁধে অনুসন্ধানে নেমেছিলেন একাধিক গবেষক। শেষ পর্যন্ত ডঃ ডেভিড স্যান্ডস তুলে আনেন বেশ কয়েকটি যুক্তিযুক্ত কারণ। ডেভিড দাবি করেন, ব্রিজের তলায় কোনো জল না থাকায়, জঙ্গলাকীর্ণ পাথুরে জমিতে বসবাস করে মিঙ্ক প্রজাতির প্রাণীরা। কুকুরের ঘ্রাণশক্তি প্রখর হওয়ার কারণে তাদের গন্ধ পেয়ে আকৃষ্ট হয় সারমেয়রা। আর ঝাঁপ দেওয়া সেই কারণেই। পাশাপাশি ওই একই জায়গায় রয়েছে বিদ্যুৎবাহী তারের খুঁটি। যা সরাসরি সংযুক্ত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে। সেই পোস্টের কম্পনের শব্দও কুকুরকে তাড়না করে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য।

তবে ডেভিডের এই দাবি মানতে চান না অধিকাংশ প্রাণীকর্মীরাই। তাঁদের দীর্ঘদিনের সংগৃহীত পরিসংখ্যানে উঠে আসছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। ব্রিজের যেকোনো অংশ নয়, বরং একটি বিশেষ জায়গা থেকেই আত্ম হ’ত্যা’র জন্য ঝাঁপ দেয় কুকুর। পাশাপাশি রৌদ্রজ্জ্বল গ্রীষ্মের দিনেই ঘটেছে বেশিরভাগ ঘটনা। একথা ঠিক যে উষ্ণতা বেশি থাকলে মিঙ্কের গন্ধও বেশি প্রখর হয়, কিন্তু শুধু ওভারটাউন নয়, গোটা স্কটল্যান্ডের সর্বত্রই দেখা মেলে মিঙ্কের। তা সত্ত্বেও এই ধরনের ঘটনা লক্ষ করা যায় না অন্যত্র। অন্যদিকে বৈদ্যুতিক পোস্টের কম্পনের শব্দও কুকুরদের উত্যক্ত করার মতো নয় বলেই দাবি প্রাণী গবেষকদের। সব মিলিয়ে প্রায় একশো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও আজও রহস্যের ছায়াতেই রয়ে গেছে স্কটল্যান্ডের এই ঝুলন্ত সেতুটি।

পাঠকের মন্তব্য:

Check Also

১৮ ইঞ্চির শাহীনের স্বপ্ন পূরণ করলেন তামিম

বরিশালের শাহীন ফকির। ১৮ ইঞ্চি উচ্চতার এই যুবককে দমিয়ে রাখতে পারেনি শারীরিক প্রতিবন্ধিতা। ত্রিশোর্ধ্ব শাহীন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *