




টানা প্রায় ৮ বছরের প্রেমের সম্পর্ক থেকে অনেকটা পরিবারের অমতেই বিয়ে করেন এমরান হোসেন মুন্না ও সৈয়দা সাজিয়া শারমিন উষা। তারপর এক বছর না যেতেই তাদের দাম্পত্য জীবনে দেখা দেয় অশান্তির কালো ছায়া। উষা ঢাকায় পড়াশুনার সুবাদে জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায়। নানাভাবে চেষ্টা করেও উষাকে পরকীয়া সম্পর্ক থেকে ফিরাতে না পেরে অবশেষে ক্ষোভে-অভিমানে আত্মহ”ত্যা করেন এমরান হোসেন মুন্না (২৯)। বুধবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা শহরতলীর বারপাড়া এলাকায় এঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সৈয়দা সাজিয়া শারমিন উষার (২৮) বিরুদ্ধে আত্মহ”ত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন নিহত মুন্নার পিতা মো.মতিউর রহমান। নিহত মুন্না মহানগর যুবলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের মিছিল মিটিংয়ে তার সবর উপস্থিতি নেতা-কর্মীদের চোখে পড়ত।





স্থানীয় ও মামলা সূত্রে জানা যায়, শহরতলীর বারপাড়া এলাকার মো.মতিউর রহমানের পুত্র এমরান হোসেন মুন্না। লাকসামের রাজাপুর এলাকার খিলা বাজার গ্রামের সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের কন্যা সৈয়দা সাজিয়া শারমিন উষা। একসময় কুমিল্লা কর্মাশিয়াল ইন্সটিটিউটের (বর্তমানে সরকারি সিটি কলেজ ) শিক্ষার্থী ছিল মুন্না ও উষা। দুই জন এক বছরের সিনিয়র-জুনিয়র। কলেজ জীবনে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন দুইজন।
প্রেমের সম্পর্ক থেকে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারী তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের বছর খানেক পর থেকেই তাদের পারিবারিক জীবনে টানাপোড়ন শুরু হয়।উষা ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সুবাদে বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকতো আর মুন্না প্রথমে কুমিল্লায় একটি প্রাইভেট কোম্পানী চাকুরী করলেও পরে চাকুরী ছেড়ে কুমিল্লায়ই ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করে। দিনদিন তাদের মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরে।
মুন্নার পরিবারের অভিযোগ ,উষা ঢাকায় সোহেল নামের এক ছেলের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে মুন্নাকে বিভিন্ন ভাবে মানসিক নির্যাতন করত। চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারার অজুহাতে মরে যাওয়া কথা বলে কটাক্ষ করত। এতে মানসিকভাবে মুন্না ভেঙ্গে পড়ে।





বুধবার সে আত্মহ”ত্যার প্রস্তুতি নিয়ে স্ত্রীকে ছবি পাঠায় এবং ম্যাসেজ করে। কিন্তু স্ত্রী উষা এতে কর্নপাত করেনি। কাউকে জানায়নি। বরং উল্টো উসকানিমূলক কথাবার্তা বলেন। এতে মুন্না ক্ষোভে ঘরের নিজ বেডরুমে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় কাপড় পেছিয়ে আত্মহ”ত্যা করে। পরিবারের লোকজন আওয়াজ পেয়ে দরজা ভেঙ্গে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃ”ত্যু ঘটে।
ময়নাতদন্ত শেষে গত বৃহস্পতিবার বাদ যোহর গুধির পুকুরপাড় ঈদগাহ ময়দানে এমরান হোসাইন মুন্না জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় মরহুমের বিদায়ী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ ।
মরহুমের জানাযায় নামাজে অংশগ্রহণ করেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী যুবলীগের সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা, নাজমুল ইসলাম শাওন, কুমিল্লা মহানগর যুবলীগ নেতা ইমদাদুল হক চৌধুরী বাবু সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনে নেতৃবৃন্দ, আত্মীয় স্বজন ও এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।





এদিকে যুবলীগ কর্মী মুন্নার মৃত্যুতে রাজনৈতিক সহকর্মী ও সহপাঠিরা বিভিন্ন অবেগঘন স্ট্যাটার্স দিচ্ছে। আবার স্ত্রী উষার বিচার দাবী করছেন কেউ কেউ। মুন্না ও উষার হোয়াটসঅ্যাপের ম্যাসেজের কপি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। মুন্নার বন্ধু ইমদাদুল হক চৌধুরী বাবু ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, “ স্ত্রী উষার প্ররোচনায় পরে গলায় ফাসি দিয়ে আত্মহ”ত্যা করে মুন্না।
আত্মহ”ত্যা করার পূর্বেও সে তার স্ত্রী উষার সঙ্গে কথা বলেছে এবং আত্মহ”ত্যা করবে বলে জানিয়েছে। সেখানে তিনি জানিয়েছেন তার মৃত্যুর আসল রহস্য। তার স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেছেন। সাথে এটিও জানা যায় পরকিয়ার বিষয়টি উষার পরিবারকে মুন্না জানিয়েছিল, তারা সেটি এড়িয়ে গেছেন।





কতটুকু মানসিক নির্যাতন করলে একটি মানুষ আত্মহ”ত্যার পথ বেছে নেয়। আত্মহ”ত্যার পর তার পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। এভাবে ঝরে গেল আরেকটি তাজা প্রাণ। এমরান এর পরিবার সহ আমরা সবাই এই ঘটনার কঠিন থেকে কঠিনতম বিচার চাই, যেন এভাবে কোনো পরিবার সন্তান ও ভাই হারা না হয়। এমরান হ”ত্যার বিচার চাই ।”
কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আনয়ারুল আজিম জানান, খবর পেয়ে নিহতের লা”শ উদ্বার করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। পরিবার আত্মহ”ত্যার প্ররোচনার মামলা করেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।
পাঠকের মন্তব্য: