ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদ উল আযহা এর প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে কোরবানির গরু। কোরবানিকে সামনে রেখে খামারিদের মধ্যে সব চেয়ে বড় গরু বানানোর একটা প্রতিযোগিতা দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন নামে এই গরু গুলো ভাইরাল হয়। তেমনি এবারের কোরবানীর ঈদে হাঁট কাঁপাতে আসছে সেরা ৫টি গরু। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে দেখে নেওয়া যাক দেশজুড়ে ভাইরাল হওয়া সেই গরু গুলো।
নাম্বার ৫ যুবরাজ – ওজন ৩১ মন!





ষাঁড়টির বয়স ৩ বছর। উচ্চতা সাড়ে পাঁচ ফুট। বেশ সুঠাম দেহ। ওজন ১২২২ কেজি। ষাঁড়টির এমন বৈশিষ্টের কারণে খামার মালিক নাম দিয়েছেন যুবরাজ। এটিই নেত্রকোনা জেলার সবচেয়ে বড় ষাঁড়। জেলার পূর্বধলা উপজেলার আগিয়া ইউনিয়নের বানেরকান্দার কলেজশিক্ষক তুহিন মোজাম্মেলের দাবি এমনটাই। তিনি ষাঁড়টির দাম হাঁকছেন ১১ লাখ টাকা। তবে করোনার কারণে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তিনি। শুক্রবার ষাঁড়টি বিক্রি করতে রাজধানীর গাবতলী বা আফতাবনগর হাটে ওঠাবেন বলে জানিয়েছেন ষাঁড়টির মালিক তুহিন।
নাম্বার ৪ পাবনার রাজা – ওজন ৩২ মন!
পাবনার রাজা নামে এক বিশাল আকৃতির হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের একটি ষাঁড় গরু জেলায় বেশ চমক সৃষ্টি করেছে। দৈর্ঘ্যে ১০ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং উচ্চতায় ৬ ফিট বিশাল আকৃতির এই গরুটি স্কেলের ওজনে প্রায় ১২৫০ কেজি।
খামারি রাজুর দাবি, এবারের ঈদে এটাই জেলা এবং দেশের মধ্যে অন্যতম বড় আকৃতির ষাঁড় গরু হবে। গরুটির গায়ের রং সাদা ও চোখের কিছু অংশ কালো। তরুণ উদ্যোক্তা রাজুর যত্ন ও ভালোবাসায় গরুটির নাম রেখেছেন পাবনার রাজা। ৫১ লাখ টাকা দাম হাঁকিয়েছেন তরুণ এই উদ্যোক্তা।





নাম্বার ৩ রংপুরের বাদশা – ওজন ৩৮ মন!
বাদশাহ যেন বাড়ির অন্যতম পাহারাদার। অপরিচিত কেউ বাড়িতে ঢুকলেই সে গর্জে ওঠে। ডাকাডাকি করে। তখন বাদশাহকে শান্ত করেন রহিমা বেগম কিংবা তাঁর স্বামী ছাদেকুল ইসলাম। ভালোবেসে এ দম্পতি তাঁদের এই গরুর নাম দিয়েছেন বাদশা। এটির ওজন প্রায় ১৫২০ কেজি। আসন্ন কোরবানির ঈদে গরুটিকে বিক্রি করবেন তাঁরা।
বাদশাহের পেছনে খরচ লাগে বাদশাহর মতোই। প্রতিদিন সবুজ ঘাস ও দানাদারসহ খাবারের জন্য খরচ হয় ৭০০-৮০০ টাকা।
ছাদেকুল ইসলাম বলেন, তাঁর ছোট খামারে ২০১৮ সালের জুনে বাদশাহর জন্ম হয়। চাল-চলনে আচরণ বাদশাহর মতো হওয়ায় আদর করে তাঁরা গরুটির নাম রাখেন বাদশাহ। এটি ফ্রিজিয়ান জাতের গরু। তিনি বাদশাহকে মোটাতাজাকরণ কোনো ইনজেকশন দেননি কিংবা কোনো ওষুধ খাওয়াননি।
কোরবানির ঈদে বাদশাহকে তিনি বিক্রি করতে চান। দাম হাঁকিয়েছেন ১৪ লাখ টাকা। গরুটি অনেক শান্ত স্বভাবের। এত বড় গরু কোরবানির হাটে তোলা দুষ্কর। তাই বাড়িতে রেখে অনলাইনে বিক্রি করতে চান। কেউ কিনতে চাইলে গরুটি দেশের যেকোনো প্রান্তে নিজে পৌঁছে দিতেও রাজি আছেন।
নাম্বার ২ সুলতান – ওজন ৪২ মন!





নাম ‘সুলতান’। বিশাল ধড়; তার ওপর ওজন ১৬৮০ কেজি । হেলেদুলে হাঁটে বালুর আঙিনায়। সুলতান নামের মধ্যেই আছে রাজকীয় ভাব। নাম আর ওজনের সমন্বয়ে সুলতান হয়ে উঠেছে অন্যতম আকর্ষণ।
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পরম যত্নে সুলতানকে বড় করেছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রানীগাঁও এলাকার পল্লী চিকিৎসক ও খামারি রুহুল আমিন।
তিনি জানান, তিন বছর বয়সি ১৬৮০ কেজি ওজনের এ ষাঁড়ের চলাফেরা আর খাবারেও রয়েছে রাজকীয় ভাব। এখন পর্যন্ত শেরপুর জেলার সর্বোচ্চ ওজনের ষাঁড় এটি।
খড় ও ঘাস বাদেই তাকে খৈল ভুসি, ভাতের মাড়, খুদিসহ অন্তত ১০ কেজি খাবার দিতে হয় প্রতিদিন। গোসল দিতে হয় দিনে একাধিকবার। চলাফেরা করতে ছয়জনের সহযোগিতা লাগে সুলতানের। তার রাজকীয় ভাব দেখতে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে উৎসুক মানুষের।
নাম্বার ১ বাঘের হাটের ভৈরব – ওজন ৪৫ মন!
জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় গরু সদর উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামের খামারি আবুল হোসেনের। তিনটি পশুর নাম রেখেছেন ভৈরব, সুখী ও মধুমতি। ভৈরবের ওজন ৪৫ মণ। আর সুখীর সাড়ে ৪২ মণ ও মধুমতির ওজন সাড়ে ৩২ মণ। বিশাল আকৃতির এই গরু তিনটি প্রতিদিন লালন-পালন করতে বেগ পেতে হচ্ছে খামারি পরিবারের সদস্যদের।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এদের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ভিড় করছেন খামারির বাড়িতে।





খামারি আবুল হোসেন বলেন, করোনার কারণে গত বছর কোরবানিতে গরু তিনটি বিক্রি করতে পারেননি। এবারও বিক্রি নিয়ে শংকায় রয়েছেন। গরু তিনটির খাবারের জন্য প্রতিদিন তিন হাজার টাকা ব্যয় হয়। দেশীয় ফল-মূল, ঘাষ-কুটো খাওয়ায়ে বড় করেছেন। এই ব্যয় বহন করতে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার-দেনাও করতে হয়েছে। তারপরও হাল ছাড়েনি তিনি।
খামারি বলেন, ভৈরবের দাম ৪৫ লাখ টাকা, সুখীর দাম ৪০ লাখ ও মধুমতির দাম ২০ লাখ টাকা দাবি করছেন তিনি।
পাঠকের মন্তব্য: